1. admin@khoborakhobor.com : খবরাখবর :
সারাদেশে গণঅনশন করবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ - খবরাখবর
সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ০১:৪৫ অপরাহ্ন

সারাদেশে গণঅনশন করবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

  • Update Time : শনিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২১
সারাদেশে গণঅনশন করবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ
সারাদেশে গণঅনশন করবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ

শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হামলার নিন্দা জানিয়ে সারাদেশে গণঅনশন করবে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত এই গণঅনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স ঘোষণার যথাযথ বাস্তবায়ন এবং সাম্প্রদায়িকক সম্প্রীতি বিনস্টে সাম্প্রদায়িক মহলের চক্রান্ত প্রতিরোধে ২৩ অক্টোবর সারাদেশে ভোর ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত গণ-অনশন ও গণঅবস্থান এবং সাম্প্রদায়িক হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকায় এ কর্মসূচি পালিত হবে শাহবাগ চত্বরে এবং চট্টগ্রামের আন্দরকিলল্গা চত্ত্বরে।

অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে আজ আর উড়িয়ে দেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এর সবটাই পরিকল্পিত, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দেশ থেকে বিতারণ করে পুরো দেশকে সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত করা। মহানবমীর দিন ১৩ অক্টোবর সকাল ১১টায়, ভেঙে দেওয়া হয় কুমিল্লার নানুয়ার দীঘির উত্তর পাড়ে দর্পণ সংঘের অস্থায়ী পুজামণ্ডপ। চানমনি কালিবাড়ি বিগ্রহ ও ফটকে অগ্নিসংযোগে ভস্মীভুত করা হয় এবং ১৭টি পুজামণ্ডপের তোরণ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে হামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয়, ধর্ম অবমাননার কথা তুলে পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক হামলা চলে ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীর দিন পর্যন্ত। ১৩ অক্টোবর কুমিল্লার ঘটনা ছাড়াও হাজীগঞ্জে দুর্বৃত্তরা ত্রিনয়নী সংঘের পুজামণ্ডপ, লক্ষী-নারায়ণজী আখেড়ার গেইট ভেঙ্গে ফেলেছে, রামকৃষ্ণ মিশন জমিদার বাড়ির দুর্গা মন্দির, শ্মশান কালী মন্দির, নবদুর্গা সংঘ পুজামণ্ডপ, দশভুজা সংঘ পুজামণ্ডপ, সোনাইমুড়ী গ্রামের পুজামণ্ডপ, হাজীগঞ্জ শহর পুজামণ্ডপ, রামপুর লোকনাথ মন্দির, ভদ্রাকালী মন্দির, ত্রিশুল সংঘ পুজামণ্ডপ, রামপুর বলক্ষার বাজার দুর্গামণ্ডপ, হাজীগঞ্জ রাধাগোবিন্দ মন্দির, বাজারগাঁও মুকুন্দ সাহার বাড়ির দুর্গা মন্দির, হাটিলা গঙ্গানগর দুর্গামন্দিরে ভাঙচুর করা হয়েছে। লক্ষী-নারায়ণজী আখেরায় আক্রমণ চলাকালে মানিক সাহা নামে একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। একইদিন হাতিয়ার ৭টি মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। মন্দিরগুলো হলো- শংকর মার্কেটের আশুতোষ ডাক্তার বাড়রি পুজামণ্ডপ, জগন্নাথ মহাপ্রভুর সেবাশ্রম পুজা মন্দির, রাধাগোবিন্দ সেবাশ্রম পুজা মন্দির, শ্রী লোকনাথ মন্দির পুজামণ্ডপ, তপোবন আশ্রম পুজা মন্দির, গুরুচাঁদ সত্যবামা পুজা মন্দির, হাতিয়া পৌরসভা কালী মন্দির ও এর সাথে ৪-৫টি ঘরও ভাঙচুর করা হয়েছে।

মহানবমীর দিন লক্ষীপুর জেলার রামগতি সীতারাম ঠাকুর সেবাশ্রম, গাজীপুরের কাশিমপুরে সুবল দাসের মন্দির ও কাশিমপুর বাজার কালী মন্দির ভাঙচুর এবং লুটপাট, একইদিন কুড়িগ্রামের উলিপুর, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, হবিগঞ্জের বাহুবল, সিলেটে জকিগঞ্জের কালিগঞ্জ বাজার, ভোলা জেলার নবীপুরে বেশ কয়েকটি মন্দির, পূজামণ্ডপে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

ওইদিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার বাঁশখালী উপজেলার শেখেরখীল, নাপোড়া গ্রামে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এদের নেতৃত্ব দেয় মো. সাবের আহমেদ, মা. রিদোয়ান, মো. শামছুল ইসলাম। এরা সবাই শেখেরখীল, গন্ডামারা, নাপোড়ার বাসিন্দা। এদের হামলায় শেখেরখীল সর্বজনীন মন্দির ধ্বংস হয়েছে, হরি মন্দিরের সামনের সড়কের ২০টি হিন্দুর দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। গুরুতর আহত হয়ে সুকুমার দাস বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত হয়েছেন সমীর দেব, দুলাল দেব, জুয়েল শীল, লিটন দেব। শেখেরখীল সর্বজনীন মহাশ্মশানের সীমানা প্রাচীর ও মন্দির ভাংচুর করা হয়েছে। নাপোড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় সর্বজনীন কালীবাড়ি। নাপোড়া বাজার থেকে কালীমন্দির পর্যন্ত সড়কে হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩০টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন জহর লাল দেব নামে একজন বর্তমানে ডুলাহাজরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়া হামলায় আহত হয়েছেন রতন শিকদার, আশুতোষ দেব, অনুপম দেব, জগদীশ পাল, বোটন দেব। তারা বাঁশখালী উপজেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। পশ্চিম চাম্বল বাংলাবাজার করুণাময়ী কালীবাড়ি সর্বজনীন পুজা কমিটির দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুরসহ মন্দিরের যাবতীয় তৈজসপত্র লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তের দল। এতে প্রদীপ দাস, রঞ্জিত দাস, সবিতা বালা আহত হন। শীলকুপে দাস পাড়া সর্বজনীন দুর্গামণ্ডপ, কৈবল্য যুব সংঘ পুজামণ্ডপ ও শীলপাড়া পুজামণ্ডপে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়েছে।


১৩ অক্টোবর রাতে কক্সবাজার পেকুয়া উপজেলা শীলখালীর দুটি পূজামণ্ডপের প্রতিমা এবং হরি মন্দিরে লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়া ১৬টি ঘরে হামলা করে লুটপাট ও ভাঙচুর চালানো হয়। মগনামা ইউনিয়নের ১২টি ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট এবং ১টি ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয়। স্থানীয় সরস্বতী মন্দিরের দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। পেকুয়া সদর ইউনিয়ন, বারবাকিয়া ইউনিয়ন ও চকরিয়ার ৫টি পূজামণ্ডপ, লোকনাথ মন্দির লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয়।

মহানবমীর দিন ১৪ অক্টোবর বান্দরবানের লামা উপজেলার লামাবাজারের কেন্দ্রীয় হরিমন্দির দুর্গা পূজামণ্ডপে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তের দল। এই হামলায় ৫০ জন আহত হয়। এর মধ্যে গুরুতর আহত ১০ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ও ৮ জনকে জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এইদিন সন্ধ্যার পর চট্টগ্রামের বন্দর থানাদীন কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাশে জুলদা জেলেপাড়া পুজামণ্ডপে স্থানীয় জয়বাংলা ক্লাবের একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা চালায় ইলিয়াস মেম্বার, জয়নাল ও মনিরের নেতৃত্বে। জয়নাল-মনির এ দুই ভাই বিএনপি থেকে সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন।

একইদিন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন সর্বজনীন দুর্গামন্দির ও হরি মন্দির ভাঙচুর, লুটপাট চালানো হয়। খুলনার রুপসা মহাশ্মশান ও শ্মশান কালীমন্দির থেকে ১৮টি তাজা বোমা উদ্ধার করেছে র‌্যাব। ১৫ অক্টোবর নোয়াখালীর চৌমুহনীতে এবং চট্টগ্রাম মহানগরীতে আবারও সাম্প্রদায়িক হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। চৌমুহনীতে হামলায় রাধামাধব মন্দির, ইসকন মন্দির, রাম ঠাকুর মন্দির তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায়ও তারা বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদে জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে হামলা চালায় ও তোরণ ভেঙে ফেলেছে।

এদিকে বিভিন্ন পূজামণ্ডপে হামলা ও হতাহতের ঘটনায় শনিবার দুপুরে প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। তারা এসব হামলার বিচার, নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

© khoborakhobor.com All rights reserved
Designed by khoborakhobor@team