বিশেষ প্রতিনিধিঃ করোনা ভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ও কর্মহীনদের সরকারি নগদ সহায়তা কার্যক্রমের তালিকায় এলোমেলো তথ্য পাওয়া গেছে । তালিকায় একই মোবাইল নম্বর ভিন্ন নামে ব্যবহার হয়েছে একাধিক বার। অনেক বিত্তশালী এবং জনপ্রতিনিধির আত্মীয়-স্বজনের নামও রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে ।হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায় এসব ঘটনা ঘটেছে। এই উপজেলায় সাড়ে ৬ হাজার উপকারভোগীর তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ টি মোবাইল নম্বর ৩০৬ বার ব্যবহার করা হয়েছে।
তালিকায় একটি নম্বরে ৯৯ জন, একটিতে ৯৭ জন, একটিতে ৬৫ জন ও একটি নাম্বারে ৪৫ জনের নাম দেওয়া হয়েছে। নম্বরগুলো একজন স্থানীয় চেয়ারম্যানের আত্মীয় এবং ঘনিষ্ঠজন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, মুড়িয়াউক ইউনিয়নের তালিকায় ১১৭৬ জনের নামের মধ্যে ৩০/৩৫টি নম্বর একাধিক নামের সাথে লেখা হয়েছে। ০১৯৪৪৬০৫১৯৩ নম্বরে দেওয়া হয়েছে ৯৯ জনের নাম। ০১৭৪৪১৪৯২৩৪ নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে ৯৭ জনের নামে। ০১৭৮৬৩৭৪৩৯১ নম্বর দেওয়া হয়েছে ৬৫ জনের নামে। ০১৭৬৬৩৮০২৮৪ নম্বর দেওয়া হয়েছে ৪৫ জনের নামে। অন্তত ৩০টি নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে ১০/১২ জনের নাম।
একটি ওয়ার্ডের তালিকায় তিনজন হিন্দু ব্যক্তির নামও রয়েছে যদিও সেই ওয়ার্ডে কোন হিন্দু পরিবার নেই। রয়েছে অনেক বিত্তশালী পরিবারের নামের তালিকা। ওই ইউনিয়নের বিত্তবান আক্কল আলীর ছেলের নাম এসেছে তালিকায়।
এই তালিকায় একই পরিবারের ৬ জন ব্যক্তির নাম এসেছে। যার নম্বর যথাক্রমে ৯৫১, ৮৫৫, ৮৫৩, ৮৫২, ৮৫১ ও ৭৮৪।
মুড়িয়াউক ইউপি চেয়ারম্যান জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে ১১৭৬ জনের ৭৩০ জনের নাম আমরা মেইল করি। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অফিস স্টাফদের দিয়ে অবশিষ্ট তালিকা করে। তাই তালিকার বিষয়ে আমার সবকিছু জানা নেই। ঐ তালিকাটি খসড়া থাকায় আমার কোনও স্বাক্ষর ওখানে নেই। আর এখনো তো কোনও টাকাও দেওয়া হয়নি। মূলত আমার প্রতিপক্ষ খসড়া তালিকা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে। এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার সরকারি নম্বরটিতে কেউ রিসিভ করেননি। লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান জানান, শুধু মুড়িয়াউক ইউনিয়নই নয় হবিগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের তালিকায় এ ধরনের নানা অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষক দিয়ে যাচাই করলেও এখনো অনেক অনিয়ম রয়েছে।
সরকার অল্প সময়ের মধ্যে তালিকা প্রস্তুতের জন্য বলে তাই যাচাই বাছাইয়ের সুযোগ তেমন হয়নি বলে অনেকেই মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে এই অনিয়মের জন্য মানুষ কাকে দায়ী করবে? সরকারি সকল কাজে যদি এমন অবস্থা হয় তবে সাধারণ জনগণ যাবে কোথায়? সাধারণ জনগণের মধ্যে নানা ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে এই ঘটনায়। করোনা সময়ের শুরু থেকে সরকারের বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ প্রক্রিয়ায় প্রতিনিয়ত অভিযোগ উঠছে। শুরু থেকে চযল চুরি, তেল চুরি, আটা চুরির পর এখন নগদ টাকা বিতরণেও অনিয়ম। চুরি, আত্মীয়করণ স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণসহ নানা অভিযোগে সরকারের সকল ভালো উদ্যোগ গুলোতে সমালোচনার ঝড় উঠছে। এই করোনা সময়ে সাধারণ জনগণের অসহায়ত্বকে পুজি করে বেশির ভাগ নেতা কর্মী, চেয়ারম্যান, মেম্বার চুরি আর আত্মসাৎ এ মেতে উঠেছে।
সর্বশেষ করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত, কর্মহীন মানুষের মাঝে জনপ্রতি এককালীন আড়াই হাজার টাকা করে দেবার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ৫০ লক্ষ মানুষের মাঝে সরকার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই টাকা প্রদান করবে। যার জন্য সরকার ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তালিকা তৈরি করার কাজ করে। যে তালিকা শিক্ষকদের মাধ্যমে যাচাই করা হয়। যাচাইকৃত তালিকা থেকে ৫০ লক্ষ পরিবারকে এ সহায়তা দিবে। হবিগঞ্জ উপজেলার এ তালিকায় একটি নম্বরে ৯৯ জন, একটিতে ৯৭ জন, একটিতে ৬৫ জন ও একটি নাম্বারে ৪৫ জনের নাম দেওয়া হয়েছে। নম্বরগুলো একজন স্থানীয় চেয়ারম্যানের আত্মীয় এবং ঘনিষ্ঠজন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ অবস্থায় সাধারণ জনগণের মধ্যে এ ধরনের অভিযোগ থাকলে কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে অনেকেই মনে করছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত আশা করছে হবিগঞ্জ উপজেলার সাধারণ জনগণ।