সারা শরীরে নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে বুধবার বিকেলে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় ঠাঁই হয়েছে দশ বছরের শিশু চাঁদনীর।পেটের দায়ে সে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিল ঢাকায়। কিন্তু নয় মাস পর বুধবার (১০ মার্চ) শরীরে দগদগে ঘা নিয়ে সে কুষ্টিয়ায় ফেরে।
চাঁদনী কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম পশ্চিমপাড়ার হতদরিদ্র তমিজ উদ্দিন তোজার মেয়ে।
শিশুটির পারিবারিক সূত্র জানায়, প্রায় নয় মাস আগে একই গ্রামের মাসুদুজ্জামান রান্টুর মেয়ে নেছার খাতুন এক হাজার টাকা বেতন ও খাওয়া-পরার শর্তে এক প্রকার জোর করেই ঢাকার বাসায় কাজের জন্য তাকে নিয়ে যায়। কিন্তু ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার ক’দিন পর থেকেই তারা চাঁদনীর পরিবারের সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করা চাঁদনী সাংবাদিকদের জানায়, ঢাকায় যাওয়ার চার দিন পর থেকেই তার ওপর গৃহকর্ত্রীর নির্যাতন শুরু হয়। থালা-বাসন মাজা, ঘর মোছা, কাপড় কাচা থেকে শুরু করে বাসার সব কাজ করতে হতো। কথায় কথায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হতো। লোহার খুন্তি গরম করে ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। রাতে মারপিটের পর ওড়না দিয়ে হাত-পা বেঁধে ঘরের মেঝেতে উপুড় করে ফেলে রাখতো।
চাঁদনীর বাবা তমিজউদ্দিন তোজা জানান, অনেকটা জোর করেই নেছার খাতুন মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে যায়। মাসে মাসে পারিশ্রমিক দেওয়ার কথা থাকলেও একটি পয়সাও দেয়নি। গত ন’মাস তাদের চাঁদনীর সাথে যোগাযোগ করতেও দেয়নি। অবশেষে গ্রামবাসীর চাপে বুধবার চাঁদনীকে তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার শামীম মাহমুদ জানান, মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। ধারাবাহিক নির্যাতনের কারণে শারীরিকভাবেও সে খুব দুর্বল হয়ে পড়েছে।
তবে নেছারের বাবা মাসুদুজ্জামান রান্টু দাবি করেন, শিশুটিকে নির্যাতন করা হয়নি। এগুলো তাদের বিরুদ্ধে গ্রাম্য চক্রান্ত। শিশুটির শরীরে আগে থেকে ঘা-পাঁচড়া ছিল।
খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার জানান, নির্যাতনের ঘটনাটি ঢাকায় ঘটেছে। শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে এলাকার একটি গ্রুপ বিষয়টি মীমাংসার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।