ঢাকার কেরানীগঞ্জের হজরতপুর সেতুর কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশে ৪০ বছর বয়সী এই অভিনেত্রীর বস্তাবন্দি লাশ সোমবার পাওয়া যায়। ময়নাতদন্তের পর পুলিশ জানায় লাশ পাওয়ার একদিন আগে তাকে হত্যা করা হয়েছিল।
সোমবার লাশ পাওয়ার পরপরই নোবেল ও ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের মাধ্যমে হেফাজতেও নিয়েছে পুলিশ।
দুই যুগ আগে ঢাকাই চলচ্চিত্রে অভিষিক্ত শিমু মূলত পার্শ্ব অভিনেত্রীর চরিত্রে অভিনয় করতেন। পাশাপাশি কয়েকটি টিভি নাটকে অভিনয় এবং প্রযোজনাও করেন তিনি।
কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর তা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (মিটফোর্ড) হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। মঙ্গলবার দুপুরে সেখানে লাশের ময়নাতদন্ত হয়।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক সলিমুল্লাহ মেডিকের কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ বলেন, নিহতের গলায় স্পষ্ট কালো দাগ রয়েছে।
“ধারণা করা হচ্ছে, রশি বা কোনো কিছু দিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ভিসেরা (অভ্যন্তরীন কিছু অঙ্গ) সংগ্রহ করা হয়েছে।”
স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঢাকার গ্রিনরোড এলাকার বাসায় থাকতেন ৪০ বছর বয়সী শিমু।
শুটিংয়ের জন্য রোববার বাসা থেকে বেরিয়ে শিমু আর ফেরেননি উল্লেখ করে সোমবার কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন নোবেল।
এর মধ্যে সোমবার দুপুরে স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে হজরতপুর সেতুর কাছে আলিয়াপুর এলাকায় রাস্তার পাশে বস্তাবন্দি এক নারীর লাশ উদ্ধার করে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। এটি যে শিমুর লাশ তখনও তা জানা যায়নি।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী রমজানুল হক বলেন , লাশটি দুটি বস্তায় ভরা ছিল। একটি চটের বস্তা পায়ের দিক থেকে আরেকটি মাথার দিক থেকে ঢুকিয়ে মাঝ বরাবর সেলাই করা হয়েছিল।
খুন করার পর লাশটি গাড়িতে করে নিয়ে আলিয়াপুর এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়, বলেন তিনি।
পুলিশ লাশ মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেওয়ার পর রাতে সেখানে গিয়ে তা শিমুর বলে শনাক্ত করেন তার বড় ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন।তিনি হত্যাকাণ্ডের জন্য বোনজামাইকে দায়ী করে বলেন, ‘মাদকাসক্ত’ নোবেলের সঙ্গে শিমুর দাম্পত্য কলহ ছিল।
খোকন দাবি করেন, বাসাতেই শিমুকে খুন করে লাশ সরিয়ে নেওয়া হয় নোবেলের গাড়িতে।
গাড়িতে রক্তের দাগ ছিল বলেও দাবি করেন শিমুর ভাই। ওই গাড়িটি পুলিশ জব্দও করেছে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিমুর নাক থেকে গড়িয়ে পড়া রক্তের দাগ ছিল।
খোকনের অভিযোগের পর রাতেই নোবেল ও ফরহাদকে আটক করে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় নেওয়া হয়।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদের পর ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সরদার মঙ্গলবার দুপুরে তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন।
তিনি বলেন, ‘পারিবারিক বিষয়াদি ও দাম্পত্য কলহের’ কারণে শিমুকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করেছে শিমুর স্বামী নোবেল এবং লাশ গুম করতে সহায়তা করেছেন নোবেলের বন্ধু ফরহাদ।
তিনি বলেন, “পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে স্বামী নোবেলের সাথে (শিমুর) দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। দাম্পত্য কলহের জেরে গত ১৬ জানুয়ারি (রোববার) সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে যে কোনো সময় খুন হন শিমু।”
শিমুর ভাই খোকন সাংবাদিকদের বলেন, শিমু রোববার গভীর রাতেও বাসায় না ফেরায় এবং তার ফোন বন্ধ থাকায় তাদের সন্দেহ হয়। এরপর সম্ভাব্য সব জায়গায় তারা খোঁজ নিতে শুরু করেন। বিভিন্ন হাসপাতাল, থানা ও এফডিসিতেও যান।
সোমবার রাতে কেরানীগঞ্জে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর লাশ উদ্ধারের খবর পেয়েই তিনি থানায় ছুটে যান। পরে সেখান থেকে যান মর্গে।
সোমবার রাতেই শিমুর স্বামী নোবেল, তার বন্ধু ফরহাদ এবং তাদের গাড়িচালকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন খোকন।