তারা বলেন, সরকারের অযোগ্যতা ও জবাবদিহি না থাকায় লকডাউন সম্পূর্ণ ‘অকার্যকর’ হয়ে পড়েছে। সব খাতে চরম দুর্নীতি দেশের অর্থনীতিকে ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলেন, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান।
শনিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির নেতাদের এক ভার্চুয়াল বৈঠকে বিএনপি নেতারা এসব বলেন। রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকের বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়।
নেতারা বলেন, ‘সরকারের অযোগ্যতা এবং জবাবদিহিতা না থাকায় কারনে লকডাউন সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। গরীব সাধারণ মানুষ, দিন আনে দিন খায় শ্রেণির মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা না করে অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরের শ্রমিক ও কর্মরত ব্যক্তিদের নগদ টাকা ট্রান্সফারের ব্যবস্থা না করে লকডাউন কখনও কার্যকর হতে পারে না। মানুষ ক্ষুধার তাগিদে কাজের সন্ধানে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে।’ বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, প্রকৃত পক্ষে করোনাভাইরাস নিয়ে সরকারের কোনো সুপরিকল্পিত কর্মসূচি নেই।
তারা বলেন, ‘প্রণোদনার ক্ষেত্রে, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ও ভ্যাকসিন সংগ্রহ এবং বিতরণে চরম অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং অযোগ্যতার কারণে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে এই ভয়াবহ ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।’
স্থায়ী কমিটির সভায় রাজধানী ও সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনার ডেল্টা ভেরিয়েন্ট সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নেওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন নেতারা।
তারা বলেন, ‘রোগীর চাপে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় জরুরি চিকিৎসা উপকরণ সংকট এবং জীবন রক্ষাকারী ঔষধসমূহের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। রাজধানীর কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে অধিকাংশ জরুরি চিকিৎসার উপকরণ মজুদ প্রায় শেষ। রেমডিসিভির ইনজেকশন নে, করোনা টেস্টিং কিট নেই, ভেন্টিলেটর ও হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা নেই। এছাড়াও আইসিইউ বেড, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর অক্সিজেন সিলিন্ডারের পরিমাণ অত্যন্ত অপর্যাপ্ত।’
করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যকে মিথ্যাচার অভিহিত করে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের নেতারা বলেন, ‘জেলা হাসপাতালগুলোতে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। অক্সিজেন এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের অভাবে অনেকেই মারা যাচ্ছেন। অথচ সরকার সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ‘
সভায় সুচিকিৎসার স্বার্থে অবিলম্বে সমন্বিত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়। অবিলম্বে করোনাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, সংশ্লিষ্ট জাতীয় কমিটি, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, এনজিও এবং রাজনৈতিক নেতাদের মতামতের মাধ্যমে যৌথ প্রচেষ্টার উদ্যোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানান বিএনপির সিনিয়র নেতারা।
বিএনপি নেতারা বলেন, ‘সুনামগঞ্জের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে দুই মন্ত্রীর পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর করোনা ভ্যাকসিন সংগ্রহে বিষয়ে মন্তব্য প্রমাণ করেছে যে, সরকারের মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। চরম সমন্বয়হীনতা, অযোগ্যতা এবং দুর্নীতি প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পকে শুধুমাত্র লুটপাটের ক্ষেত্রে পরিণত করা হয়েছে।’
সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।