তবে যে দুই প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লোপাট করা হয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানের মালিকরা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করছেন বলে দাবি করেছেন যশোর শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন।
বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) অভ্যন্তরীণ অডিটে টাকা লোপাটের ঘটনা ধরা পড়ে এবং প্রকাশ্যে আসে। এরপর চেক জালিয়াতির ঘটনা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশের পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এর দুদিন পর রোববার (১০ অক্টোবর) সকাল পৌনে ১০টার দিকে যশোর শিক্ষাবোর্ড সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা দুদক যশোর কার্যালয়ে এসে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। যার সূত্র ধরে দুদক তদন্ত শুরু করেছে।
অভিযোগ দাখিলের পর দুপুর ১২টায় দুদক যশোর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাতের নেতৃত্বে একটি টিম শিক্ষাবোর্ড যায়। দুদক কর্মকর্তারা বোর্ডে গিয়ে তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের অংশ হিসেবে কাগজপত্র সংগ্রহ করছেন তারা।
দুদক যশোর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাতের বলেন, শিক্ষাবোর্ড থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তারা ঢাকায় প্রধান কার্যালয়কে বিষয়টি জানিয়েছেন। প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে তারা তদন্ত শুরু করেছেন। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায় , ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড সরকারি কোষাগারে জমার জন্য আয়কর ও ভ্যাট বাবদ ১০ হাজার ৩৬ টাকার নয়টি চেক ইস্যু করে। নয়টি চেক জালিয়াতি করে ‘ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নামে এক কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার ১০ টাকা এবং ‘শাহীলাল স্টোর’ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের নামে ৬১ লাখ ৩২ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়।
আরও জানা যায়, যশোর শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেনের সঙ্গে উপ-সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন, প্রশাসন শাখার ভারপ্রাপ্ত সেকশন অফিসার রাকিব হাসান ও হিসাব সহকারী আবদুস সালাম এ টাকা উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত বলেও আলোচনা চলছে। ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবুও ওই চার কর্মকর্তাকে দায়ী করে সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য দিয়েছেন। ফলে ওই চার কর্মকর্তা ও দুই ব্যবসায়ী এ টাকা লোপাটের ঘটনায় ফেঁসে যেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে হিসাব সহকারী আবদুস সালাম সপরিবারে পালিয়ে গেছেন।
এদিকে হিসাব সহকারী আবদুস সালাম সপরিবারে পালিয়ে যাওয়া বিষয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন বলেন, কিছু না জানিয়ে রোববার অফিসে অনুপস্থিত আব্দুস সালাম। তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছেন তিনি (হিসাব সহকারী) পরিবারসহ বাড়ি থেকে পালিয়েছেন।
বোর্ড চেয়ারম্যান আরও দাবি করেন, যে দুটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে, তাদের মালিকরা বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা ফিরিয়ে দেবেন বলে খবর পাঠাচ্ছেন। তবে এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া। টাকা ফেরত দিলেও তা আদালতের মাধ্যমেই নিষ্পত্তি হবে।
যশোর শিক্ষাবোর্ড এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম এর আগেও অনেক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এর আগে ১২ লাখ টাকার একটি দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি। ওই সময় তদবির করে তিনি সেখান থেকে রক্ষা পান। এরপর আড়াই কোটি টাকা দুর্নীতির সঙ্গেও তিনি জড়িত বলে নাম এসেছে।
আব্দুস সালাম দুর্নীতির মাধ্যমে উপশহরে দুটি আলিশান বাড়ি, শ্বশুরবাড়ি এলাকায় ১০ বিঘা জমি ও একটি বেসরকারি ক্লিনিকের মালিকানা অর্জন করেছেন বলেও অভিযোগ করেন মো. আসাদুজ্জামান।