খবরাখবর ডেস্কঃ সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে করা হয়েছে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে সবার জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে একটি আদেশ জারি করা হয়েছে।
সব ধরনের কর্মস্থলে, বাজার-বিপণী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়, গণপরিবহন, সামাজিক অনুষ্ঠান এবং রাস্তায় পথচারীদেরও এখন থেকে এ নিয়ম মেনে চলতে হবে।
কারা কীভাবে এই নির্দেশনার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবেন, সে বিষয়ে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে পরিপত্রে।
১. সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সেবাগ্রহীতাদের বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সংশ্লিষ্ট অফিস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
২. সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালসহ সকল স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে আসা সেবাগ্রহীতাদের আবশ্যিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির ও গির্জাসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট পরিচালনা কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৪. শপিংমল, বিপণি বিতান ও দোকানের ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও মার্কেট ব্যবস্থাপনা কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৫. হাট-বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মাস্ক ছাড়া কেউ পণ্য কেনা-বেচা করবেন না। স্থানীয় প্রশাসন ও হাট-বাজার কমিটি বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৬. সড়ক, নৌ, রেল ও আকাশপথে সব ধরনের গণপরিবহনে চালক, চালকের সহকারী, এবং যাত্রীদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। গণপরিবহনে চড়ার আগেই যাত্রীদের মাস্ক পরতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং মালিক সমিতি বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
৭. পোশাক কারখানাসহ সকল শিল্প কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃকপক্ষ ও মালিকরা বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
৮. হকার, রিকশা ও ভ্যানচালকসহ সকল পথচারীকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিশ্চিত করবে।
৯. হোটেল ও রেস্তোরাঁয় কর্মরত ব্যক্তি এবং জনসমাবেশ চলাকালে আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরতে হবে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মালিক সমিতি নিশ্চিত করবে।
১০. সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে আসা ব্যক্তিদের মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান নিশ্চিত করবেন।
১১. বাড়িতে কারও করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকলে পরিবারের সুস্থ সবার মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
১২. এ পরিপত্র বাংলাদেশে বসবাসরত সবার জন্য প্রযোজ্য।
এর আগে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সারা বিশ্বের বেশ কিছু সংগঠন ও ব্যক্তিত্ব পরামর্শ দেয়। যার ফলে বিশ্বের নানা দেশে দেশে বাধ্যবাধকতা জারি করা হয়।
রয়াল সোসাইটির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ভেঙ্কি রামাকৃষ্ণান বলছেন, কেউ, জনবহুল প্রকাশ্য স্থানে যখনই যাবেন তখনই তার মাস্ক পরা উচিত।
তার কথায় এতে যিনি মাস্ক পরছেন তিনিও নিরাপদ থাকবেন এবং তার কাছাকাছি যারা আছেন তারাও সুরক্ষা পাবেন, এবং এর পক্ষে তথ্যপ্রমাণ আছে।
একাডেমি বলছে, মাস্ক পরতে না চাওয়াকে মদ খেয়ে গাড়ি চালানোর মতই খারাপ চোখে দেখা উচিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একসময় বলেছিল যে মাস্ক পরার পক্ষে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই। কিন্তু জুন মাসে তারা তাদের পরামর্শে পরিবর্তন এনে বলে – যেখানে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা সম্ভব নয় সেরকম প্রকাশ্য স্থানে মাস্ক পরা উচিত।
বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া, কথা বলা, বা হাঁচি-কাশি দেবার সময় নাক-মুথ দিয়ে যে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানির কণা বেরিয়ে আসে তার মাধ্যমেই করোনাভাইরাস সবচেয়ে বেশি ছড়ায়।
এদিকে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৫৭ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত হলেন ২ লাখ ১০ হাজার ৫১০ জন। নতুন করে মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২ হাজার ৭০৯ জন।
মঙ্গলবার দুপুরে কোভিড-১৯ সম্পর্কিত নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে আরও জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন আরও ১ হাজার ৮৪১ জন। ফলে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৯৭ জনে।