1. admin@khoborakhobor.com : খবরাখবর :
ভূমধ্যসাগরের জলসীমার দ্বন্দ্বে গ্রীস তুরস্ক - খবরাখবর
শুক্রবার, ২৪ মার্চ ২০২৩, ০২:২৫ পূর্বাহ্ন

ভূমধ্যসাগরের জলসীমার দ্বন্দ্বে গ্রীস তুরস্ক

  • Update Time : রবিবার, ২৬ জুলাই, ২০২০
warship
warship

আন্তর্জাতিক খবরাখবরঃ তুরস্কের সাথে ইউরোপের দ্বন্দ্ব এখন নিত্যকার। ভূমধ্যসাগরে জলসীমা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে তুরস্কের সাথে ইউরোপীয় দেশ গ্রীস।
সর্বশেষ তুরস্ক ঘোষণা করেছে, ভূমধ্যসাগরের একটি এলাকায় গ্যাস ড্রিলিং জরিপের জন্য তারা একটি জাহাজ পাঠাচ্ছে। এ কথা ঘোষণার পরই গ্রিসের সাথে তাদের তীব্র দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, এবং ব্যাপারটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও।
নানা বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে এমনিতেই তুরস্ক ও গ্রিসের সম্পর্ক ভালো নয়। তার ওপর তুরস্কের এই জাহাজ পাঠানোর খবরে গ্রিসের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয় । কারণ তুরস্কের দক্ষিণ উপকুলের কাছাকাছি ওই জায়গাটি গ্রিসেরও একটি দ্বীপের নিকটবর্তী।

পরিস্থিতি এমনই যে ফরাসী প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ বলেছেন, পূর্ব ভুমধ্যসাগরে, তার ভাষায়, উস্কানির ব্যাপারে চুপ করে থাকাটা ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য ভুল হবে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সময় রক্ষণশীল ব্লকের প্রধান ম্যানফ্রেড ওয়েবার বলেন, তুরস্কের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সময় এসে গেছে।
ইউরোপের নেতারা বলছেন, পূর্ব ভুমধ্যসাগরে তুরস্ক এবং রাশিয়া তাদের তৎপরতা ক্রমশ:ই বাড়িয়ে চলেছে, এবং এতে তারা স্পষ্টতই উদ্বিগ্ন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, তুরস্ক যে সতর্কবার্তা ইস্যু করেছে তা অনভিপ্রেত এবং ভুল বার্তা দিচ্ছে।
গ্রিস বলছে, তুরস্ক গ্যাস অনুসন্ধান জাহাজ সংক্রান্ত যে সতর্কবার্তা দিয়েছে – তা অবৈধ।
গ্রিস ও তুরস্কের মধ্যে সম্পর্ক এমনিতেই ভালো নয়।

নৌকায় করে ভূমধ্যসাগর পার হয়ে-আসা অভিবাসীদের নিয়ে গ্রিস ও তুরস্কের ঝগড়া হয়েছে।
এমাসের প্রথম দিকে ইস্তাম্বুলের হাইয়া সোফিয়া জাদুঘর – যা কয়েক শতাব্দী ধরে অর্থডক্স খ্রিষ্টানদের গির্জা ছিল – তাকে মসজিদে পরিণত করার কথা ঘোষণা করে তুরস্ক। এ ঘটনাটিও গ্রিসকে মর্মাহত করে।
সবশেষ এ ঘটনার ক্ষেত্রে গ্রিস বলেছে, তুরস্কে নৌবাহিনীর এই পদক্ষেপ গ্রিসের সার্বভৌম অধিকারের লংঘন। গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোতাকিস এ নিয়ে জার্মানর চ্যান্সেলর আংগেলা মার্কেলের সাথে কথা বলেছেন।
পরিস্থিতি নিয়ে গ্রিসের অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের সাথেও কথা বলার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
বুধবার পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা যায় যে ওরুচ রেইস নামে তুর্কি জরিপ জাহাজটি এখনো তুরস্কের আন্তালিয়া বন্দরেই আছে।
যে এলাকাটিতে জরিপ চালানো হবে বলে তুরস্কের সতর্কবার্তায় বলা হয় – তা সাইপ্রাস এবং ক্রিট দ্বীপের মাঝখানে।
গ্রিসের সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে যে তুরস্ক এবং গ্রিস দুই দেশেরই নৌবাহিনীর জাহাজগুলো গ্রিসের কাস্তেলোরিজো দ্বীপের কাছাকাছি একটি এলাকার দিকে যাচ্ছে – যা আবার তুরস্কের মূলভূমি থেকে অল্প কিছু দূরে।
তুরস্ক এবং গ্রিস দুটি দেশই নেটোর সদস্য। কিন্তু পূ্র্ব ভূমধ্যসাগর এলাকা থেকে জ্বালানি আহরণের প্রতিযোগিতায় তারা হয়ে উঠেছে পরস্পরের প্রতিপক্ষ।
সম্প্রতি সাইপ্রাস দ্বীপের উপকুলে সাগরে বিশাল গ্যাসের মজুত আবিষ্কৃত হয়। এর পরই সিপ্রিয়ট সরকার, গ্রিস, ইসরায়েল এবং মিশর এই সম্পদ ব্যবহারের জন্য একসাথে কাজ করতে উদ্যোগী হয়।
এ ব্যাপারে একটা চুক্তিও করা হয়েছে যে ভূমধ্যসাগরের নিচ দিয়ে একটা ২০০০ কিলোমিটার (১২০০ মাইল) দীর্ঘ পাইপলাইন নির্মিত হবে এবং তা দিয়ে গ্যাস সরবরাহ করা হবে ইউরোপে।

আংকারা সবসময়ই যুক্তি দিয়ে আসছে যে সাইপ্রাসের প্রাকৃতিক সম্পদ ভাগাভাগি করতে হবে।
এর পর ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে তুরস্ক লিবিয়ার সাথে এক চুক্তি স্বাক্ষর করে। আংকারার বক্তব্য, এর মাধ্যমে তারা তুরস্কের দক্ষিণ উপকুল থেকে লিবিয়ার উত্তর-পূর্ব তীর পর্যন্ত একটি বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা সৃষ্টি করেছে।
মিশর বলেছে, এ উদ্যোগ অবৈধ। গ্রিস বলে, এটা এক অবাস্তব উদ্যোগ কারণ এ দুটি দেশের মাঝখানে যে গ্রিসের একটি দ্বীপ ক্রিটের অবস্থান – তা বিবেচনায় নেয়া হয়নি।
মে মাসের শেষ দিকে তুরস্ক ঘোষণা করে যে তারা আগামী মাসগুলোতে আরো পশ্চিমের কিছু এলাকায় গ্যাসকুপ খনন শুরু করার পরিকল্পনা করছে।
এ খবরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্য গ্রিস ও সাইপ্রাসের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।
পূর্ব ভূমধ্যসাগরে খনন কাজ চালানোর জন্য টার্কিশ পেট্রোলিয়াম কোম্পানিকে বেশ কয়েকটি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গ্রিসের রোডস এবং ক্রিট দ্বীপের নিকটবর্তী সামুদ্রিক এলাকাও রয়েছে।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতে বলেছেন, “সবাইকে এটা মেনে নিতে হবে যে তুরস্ক এবং উত্তর সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্রকে এ অঞ্চলের জ্বালানি সংক্রান্ত সমীকরণের বাইরে রাখা যাবে না।”
পূর্ব ভূমধ্যসাগর এবং ইজিয়ান সাগর এলাকায় গ্রিসের এমন বহু দ্বীপ আছে যা তুরস্কের খুব কাছে এবং উপকুল থেকে দেখা যায়।
ফলে এখানে কার সমুদ্রসীমা কোথায় – তা নির্ধারণ এক জটিল ব্যাপার।
অতীতে এ নিয়ে দুটি দেশের মধ্যে প্রায় যুদ্ধ বেধে যাবার উপক্রমও হয়েছিল।

গ্রিস যদি তার সমুদ্রসীমা ছয় মাইল থেকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ১২ মাইল পর্যন্ত সম্প্রসারিত করে – তাহলে তুরস্কের যুক্তি অনুযায়ী তার নিজের সমুদ্রপথগুলো গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সমুদ্রসীমা ছাড়াও এখানে আছে বিশেষ (এক্সক্লুসিভ) অর্থনৈতিক এলাকা। এর একটি হচ্ছে তুরস্ক আর লিবিয়ার মধ্যে। আরেকটি আছে সাইপ্রিয়ট বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা যাতে রয়েছে লেবানন, মিশর ও ইসরায়েল।
এগুলোর সীমা হতে পারে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত।
গ্রিসের কাস্টেলোরিজোর অবস্থান হচ্ছে তুরস্কের মূলভূমি থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে। তারই বা কি হবে?
গ্রিস বলছে, তুরস্ক যে এলাকায় ড্রিলিং জরিপ চালাবে বলে সতর্কবার্তা জারি করেছে – কাস্টেলোরিজোর উপকুলীয় এলাকার অনেকখানি তার মধ্যে পড়ে যায়।
কিন্তু তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলছেন, গ্রিসের মূলভূমি থেকে অনেক দূরে তাদের যেসব দ্বীপ আছে সেগুলো তুরস্কের খুবই কাছে। তাই তারা তাদের চারপাশের অগভীর সমুদ্র এলাকাকে ‌কন্টিনেন্টাল শেলফ‌ অর্থাৎ তার নিজস্ব স্থলভাগের অংশ বলে দাবি করতে পারে না।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট গত মাসে বলেছেন, তুরস্কের মানুষকে তাদের মূলভূমিতে আটকে রাখতে যে মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে – আংকারা তা ছিঁড়ে ফেলে দেবে। আংকারা জোর দিয়ে বলেছে তারা জাতিসংঘের সমুদ্র সংক্রান্ত আইন মেনেই কাজ করছে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এ ব্যাপারে গ্রিসের অবস্থানকে সমর্থন করেছে।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাজ এথেন্স সফরে গিয়ে তুরস্কের প্রতি পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় উস্কানিমূলক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন।

জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাজ এথেন্স সফরে গিয়ে তুরস্কের প্রতি পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় উস্কানিমূলক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছেন
মি. ম্যাক্রঁ ত তাদের সার্বভৌমত্ব লঙঘনের কড়া নিন্দা করে বলেছেন, ইইউ’র মেরিটাইম অঞ্চলে যে কেউ হুমকি সৃষ্টি করলে তার ওপর অবশ্যই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।
বিশেষত: লিবিয়ার পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ফ্রান্সের সাথেও তুরস্কের সম্পর্ক খারাপ হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

© khoborakhobor.com All rights reserved
Designed by khoborakhobor@team