দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি ও ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমালোচনা ঠেকাতে মন্ত্রিসভায় এই রদবদল এনেছেন। একই সঙ্গে দেশটির স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ অন্তত ১২ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা পদত্যাগ করেছেন।
বুধবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর মন্ত্রিসভায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ধরনের রদবদল করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার সরকারের মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ৩৬ জন। এছাড়া রদবদলের আগে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীসহ কমপক্ষে ১২ জন পদত্যাগ করেছেন।
ভারতের নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা ৫২ থেকে বাড়িয়ে ৭৭ করা হয়েছে। নতুন ৩৬ জন ছাড়াও প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন সাতজন। দেশটির মন্ত্রিসভায় এমন এক সময় এই রদবদল আনা হলো যখন উত্তরপ্রদেশের মতো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে।
করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণ ও ভঙ্গুর অর্থনীতি নিয়ে দেশটিতে সরকারের তুমুল সমালোচনার মাঝে বুধবার নতুন এই মন্ত্রিসভার ঘোষণা এল। কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ছোট-বড় সব শহর ও একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ছে।
মন্ত্রিসভায় নতুন মন্ত্রীদের অন্তর্ভুক্তির তুলনায় দেশটিতে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকারের প্রভাবশালী তিন— তথ্যপ্রযুক্তি ও আইনমন্ত্রী রবী শঙ্কর প্রসাদ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন ও পরিবেশ মন্ত্রী প্রকাশ জাভেদকারের পদত্যাগ।
মহামারিতে দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার স্বরূপ উন্মোচিত হওয়ায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। এছাড়া নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধান যে কয়েকজন মুখপাত্র ছিলেন; তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জাভেদকার। সবকিছু ছাপিয়ে জাভেদকার ও রবি শঙ্কর প্রসাদের পদত্যাগ অনেকের কাছে বিস্ময় জাগানিয়া হিসেবে এসেছে।
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন বিজেপির সাবেক সরকারে যে কয়েকজন মন্ত্রী ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম বিজেপির প্রবীণ নেতা রবি শঙ্কর প্রসাদ, জাভেদকার। তবে বুধবার সন্ধ্যায় নতুন মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ভবনে উপস্থিত ছিলেন পদত্যাগকারী এই তিন হেভিওয়েট মন্ত্রী।
দেশটির মন্ত্রিসভা থেকে যারা পদত্যাগ করেছেন
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন, কেন্দ্রীয় বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়,
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী অশ্বিনী কুমার চৌবে, কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী মেশ পোখরিয়াল নিশঙ্ক, কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গাংওয়ার,কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী,কেন্দ্রীয় জলশক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রতন লাল কাটারিয়া, কেন্দ্রীয় রাসায়নিক ও সার মন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া,
সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থোয়ার চান্দ গেহলোট,কেন্দ্রীয় পশুসম্পদ, মৎসসম্পদ, দুগ্ধ শিল্প ও ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোগ বিষয়ক মন্ত্রী প্রতাপ সারাঙ্গি,
কেন্দ্রীয় ভোক্তা, খাদ্য ও গণবণ্টন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মন্ত্রী রায় সাহেব দানবে পাটিল,
কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় ধৌত্র।
নতুন যারা জায়গা পেয়েছেন তাদের মধ্যে কয়েকজনের নামের তালিকা প্রকাশ করেছে এনডিটিভি—
জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, নারায়ণ রানে, অনুপ্রিয়া প্যাটেল,কপিল পাটিল,মীণাক্ষী লেখি, অজয় ভট্ট
,ভূপেন্দর যাদব,সুনীতা দুগ্গাল,পশুপতি পরশ,ভারতী পাওয়ার,অশ্বিনী বৈশ্বানভ,শোভা করন্দালজে
পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্যে আছেন কেন্দ্রীয় অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, কেন্দ্রীয় পঞ্চায়েত, কৃষি ও কৃষক কল্যাণ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী পুরুষোত্তম রূপালা, কেন্দ্রীয় যুব, ক্রীড়া ও সংখ্যালঘু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু, কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল ও নগর উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী ও বন্দর, নৌযান ও নৌ-চলাচল বিষয়ক কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী মানুষ মান্দব্য।