মানসিক স্বাস্থ্য বলতে মানসিকভাবে ব্যক্তির সুস্থতাকে বোঝায়। একজন ব্যক্তি যখন চারপাশের সব সুশৃঙ্খলতা বা বিশৃঙ্খলতা দেখার পর নিজেকে সুন্দর, সুস্থ ও দেশের সুনাগরিক হিসেবে পরিচিত করাতে পারে, তখন তাকে আমরা একজন সুস্থ মানুষ হিসেবে গণ্য করি।
যখন একজন মানুষ সুস্থ থাকে তখন পারিবারিক সামাজিক ও কর্মক্ষেত্রে সে ব্যক্তিগত সন্তুষ্টির সঙ্গে সঙ্গে সবার সন্তষ্টির অর্জন করতে পারে এবং সবাইকে আস্থাভাজন হতে পারে। অর্থাৎ মানসিক স্বাস্থ্য বলতে শারীরিক ও নৈতিক এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মিথসক্রিয়ার আত্মোন্নয়নমূলক জীবনের প্রতিশ্রুতি হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য।
মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের ব্যাপারটি সৃষ্টি হয় পরিবার থেকে। কারণ একটি শিশুর প্রথম বিকাশ শুরু তার পরিবারে। অতি আদর, অবহেলা, অতিশাসন শিশুর স্বাভাবিক বিকাশকে যেমন ব্যাহত করে তেমনি পরিমিত আদর, ভালোবাসা, শাসন, মর্যাদা ও কাজের স্বীকৃতি শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ নিশ্চিত করে। সুতরাং পরিবারগুলোকে সুগঠিত হতে হবে আন্তরিকতায় সঙ্গে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, প্রতি ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে সারাবিশ্বে কেউ না কেউ আত্মহত্যার মাধ্যমে প্রাণ হারান। আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুর অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য। অধিকাংশ ব্যক্তিই আত্মহত্যার সময় কোনো না কোনো মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর শতকরা ১৬ ভাগ ও শিশু কিশোরদের শতকরা ১৮ ভাগ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। বিপুল এই জনগোষ্ঠীর একটি বিরাট অংশ অনেক সময় প্রচলিত ভ্রান্ত ধারনা, কুসংস্কার ও চিকিৎসা প্রাপ্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। এতে কর্মক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যা জাতীয় অগ্রগতির উন্নয়নের পথে বড় বাধা।
মানসিক রোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক অবহেলা ও বৈষম্যের শিকার। এর প্রধান কারণ মানসিক স্বাস্থ্য রোগ ও এর চিকিৎসার প্রতি জনগণের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। মানসিক রোগ ও এর চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সমাজে মর্যাদাবোধের অভাব লক্ষ্য করা যায়। এজন্য অনেকে মানসিক রোগের চিকিৎসা নেয়াকে সামাজিকভাবে লজ্জাকর মনে করেন, যেটি শারীরিক রোগের ক্ষেত্রে দেখা যায় না। কিছু সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও অনেক সময় রোগী ও পারিবারের সদস্যগণ খারাপ আচরণের শিকার হন। এজন্য পারিবারিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখা জরুরি।
মানসিক স্বাস্থ্যে মর্যাদাবোধ বিষয়টি শুধুমাত্র রোগ নির্ণয় থেকে শুরু করে চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও নিরাময় প্রক্রিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর অর্থ ব্যাপক। মানসিক রোগীর ক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন ও বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যতীত জোরপূর্বক আটকে রাখা মর্যাদাহানি, নিম্নমানের সেবা, সঠিক সময়ে চিকিৎসা যা পাওয়া এসব বিষয় মর্যাদার সংঙ্গে জড়িত।