খবরাখবর ডেস্কঃ ফ্রিল্যান্সারদের সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার চিন্তা করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ফ্রিল্যান্সারা ভালো আয় করেন, স্মার্ট। কিন্তু সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকায় বিয়ে করতে সমস্যা হয়। তাই তাদেরকে কীভাবে সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীকে চিন্তা করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত হয়ে একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা এ নির্দেশ দেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
আজকের একনেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন (১১টি)’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। এতে ব্যয় হবে ৭৯৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে সরকারের অর্থায়নে এ প্রকল্পে বাস্তবায়ন করা হবে। এ প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ফ্রিল্যান্সারদের বিয়ের সমস্যার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আইসিটি খাতে সরকার ইতোমধ্যে ভালো কাজ করেছে। ভালো আয় হচ্ছে। অনেকে লাখ লাখ টাকা আয় করেন বাসায় থেকে। আজকে একজন মন্ত্রী বললেন, উত্তরবঙ্গের এক ছেলে কোটি টাকা আয় করে।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী ইন্টারেস্টিং একটা ঘটনা বললেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন, তারা (ফ্রিল্যান্সার) এত ভালো কাজ করে, স্মার্ট, সুন্দর কাপড় পরে, কিন্তু বিয়ে করতে গিয়ে অসুবিধা হয়। শ্বশুরবাড়ি থেকে বলে, কী কাজ করো? তারা বলে, ফ্রিল্যান্সিং করি। তারা না কেরানি, না অফিসার, না পুলিশ। অথচ তারা কেরানি, অফিসারের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি আয় করে। কিন্তু বিয়ে করতে পারছে না। এটা দূর করার জন্য তিনি (প্রধানমন্ত্রী) উপায় খুঁজচ্ছেন। কী করা যায়। সবাইকে বলেছেন, আপনারা চিন্তাভাবনা করেন। তারা এই যে কাজ করছে এর সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি কীভাবে দেয়া যায় তার উপায় বের করেন। রেজিস্ট্রেশন পেতে পারে কিনা, সদস্য হতে পারে কিনা বা সার্টিফিকেট কেউ দিতে পারে কিনা। বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।’
এছাড় বন্ধ থাকা সিনেমা হল কেউ পুনরায় চালু করতে চাইলে আর্থিকসহ নীতি সহায়তা দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ‘সিনেমা হল মালিকদের সহায়তা করতে বিশেষ তহবিল গঠনের নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, কোনো হল মালিক যদি তার ব্যবসা উন্নয়ন ঘটাতে চান তাহলে তাকে ঋণ দিতে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা দরকার। এছাড়া তরুণদের বিদেশি ভাষা শেখার তাগিদ দিয়ছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, শুধু বাংলা বা ইংরেজি জানলে হবে না। সঙ্গে ফ্রান্স, জার্মান এবং চাইনিজ ভাষা শিখতে হবে। তাহলে বেশি বেশি ফ্রিল্যান্সিং কাজ পেতে সুবিধা হবে।’
এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গবেষণায় খুব আগ্রহী। তিনি বলেছেন, আরও গবেষণা করেন। অযথা পশুপাখি হত্যা করবেন না। এক হাজার পশু জন্ম দেবেন এক হাজার খাবেন। কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও ভ্রুণ স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন সংশোধনী প্রকল্পের অনুমোদন দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।’ মহিষের দুধ খুব দামি এবং পুষ্টিকর। তাই এ বিষয়ে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর এই আন্তরিক ইচ্ছা ও ফ্রিল্যান্সারদের প্রতি সহানুভূতির দৃষ্টি নিয়ে খবরাখবর প্রতিবেদক সোগাগ চক্রবর্তী নামে যশোরের একজন ফ্রিল্যান্সার (ইউটিউবার) এর সাথে কথা বলেন। তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ফ্রিল্যান্সারদের সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি এখন সময়ের দাবি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে এই বিষয়টি উপলদ্ধি করেছেন, এই জন্য ধন্যবাদ। প্রতিটি ফ্রিল্যান্সার মুক্ত চিন্তা, মুক্ত বুদ্ধি ও মেধার স্বাক্ষর রেখে দেশে রেমিট্যান্স খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এদের কোন স্বীকৃতি নেই, এরা বিয়ে করতে গেলে মেয়ের বাবা পরিচয় নিয়ে নাক শিটকায়। যদি প্রধানমন্ত্রীর এই মনোভাবের বাস্তবায়ন হয় তবে ফ্রিল্যান্সারদের সম্মান ও মর্যাদা বাড়বে।