ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার উত্তরা বিভাগের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার হারুন-অর-রশীদ জানান, নিজের ফুর্তির জন্য মাসিক বেতনে নারীদের ভাড়া করতেন নাসির উদ্দিন মাহমুদ(৬৫)।
সোমবার (১৪ জুন) বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা পরীমণিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের পর তাদের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
গ্রেফতার হওয়া অপর আসামিরা হলেন- তুহিন সিদ্দিকী অমি (৩৩), লিপি আক্তার (১৮), সুমি আক্তার (১৯) ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধা (২৪)।
ডিবির দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা যায়, ১৮-১৯ বছর বয়সী উঠতি তরুণীদের মাসিক বেতনে ভাড়া করতেন নাসির উদ্দিন মাহমুদ। এদের মধ্যে কাউকে ৩০ হাজার, আবার কাউকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ভাড়া করতেন তিনি। পরে এসব তরুণীদের বিভিন্ন ক্লাবে এবং নিজের গোপন বাসায় নিয়ে গিয়ে ফূর্তি করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে হারুন-অর-রশীদ আরও বলেন, দুপুরে উত্তরা ১ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের একটি বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। জনপ্রিয় নায়িকা পরীমণির মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এটা অমির বাসা। পরীমণির সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে নাসির তার তিন রক্ষিতাকে নিয়ে এ বাসায় পালিয়ে ছিলেন। মাদক রাখার অভিযোগে আমরা তাদেরও গ্রেফতার করেছি।
তিনি বলেন, ওই বাসাটিতে অভিযান পরিচালনার সময় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ-বিয়ার ও এক হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার মেয়েদের দেখানো জায়গা থেকে এসব মাদক উদ্ধার করা হয়।
নাসির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নাসিরের বিরুদ্ধে আগেও মাদক ও নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগে তাকে উত্তরা ক্লাব থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জেনেছি। কেউ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে আমরা সেগুলোর তদন্ত করব।
পরীমণি ক্লাবের সদস্য না হয়ে সেখানে যাওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম কমিশনার বলেন, সে (পরীমণি) স্বনামধন্য নায়িকা। ওখানে (বোট ক্লাব) যেতেই পারেন। গেলে যে তাকে ওখানে হ্যারেজ (হয়রানি) করবে সেটা ঠিক না। আসলে কী ঘটেছে তা বিস্তারিত তদন্ত করে বলতে পারব।
তিনি বলেন, এই ঘটনা নিয়ে রোববার রাতে সংবাদ সম্মেলন করেন পরীমণি। সংবাদ সম্মেলনের পরপরই আমরা অভিযানের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, তবে যেহেতু রাতে মামলা হয়নি, তাই আমরা অ্যাকশনে যাইনি। সাভার থানায় মামলার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করি।
তিনি আরও বলেন, হত্যাচেষ্টা ও ধর্ষণচেষ্টার মামলায় নাসিরকে সাভার থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে বর্তমানে মাদক উদ্ধারের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। বলে জানান হারুন।
শনিবার পরীমণি যে অভিযোগ করেছিলেন, সেটি থানায় আমলে নেওয়া হয়নি- এই বিষয়ে কী করবেন জানতে চাইলে হারুন-অর-রশিদ বলেন, আমরা পরীমণির সঙ্গে কথা বলব। আমরা প্রতিটি অভিযোগকে খতিয়ে দেখছি। আমরা তো এদের সাভার থানার মামলা থেকেই গ্রেফতার করেছি। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তাকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা বোট ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে নাসির উদ্দিন মাহমুদকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের জন্য তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ক্লাবের কার্যনির্বাহী কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে নাসির উদ্দিন মাহমুদ, তুহিন সিদ্দিকী অমি এবং শাহ এস আলমের ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়। কমিটি আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে বোট ক্লাব কর্তৃপক্ষের কাছে।