জনগণের ভালবাসার অশ্রুতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন নুরজাহান ইসলাম নীরা। আজ বাদ এশা যশোর কেন্দ্রীয় ঈদগাহে জানাজা শেষে খড়কি কবরস্থানে দাফন করা হয় আজীবন সংগ্রামী এই রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিকে।
যশোরের রাজপথের লড়াকু সৈনিক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক, যশোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান নুরজাহান ইসলাম নীরা শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)।
যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরিফ আহমেদ বৃহস্পতিবার সকালে নুরজাহান ইসলাম নীরার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে বেলা ১১টার দিকে তাকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। এখানে বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে মারা যান তিনি। ডাক্তার আরিফ আহমেদ জানান, নুরজাহান ইসলাম নীরার মৃত্যু শ্বাসকষ্টজনিত কারণে হয়েছে। এছাড়া, তিনি ব্লাডপ্রেশার, হার্টের রোগ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন।
মৃত্যুকালে নুরজাহান ইসলাম নীরার বয়স হয়েছিল প্রায় ৫৫ বছর। হাসপাতাল থেকে দুপুর ১২টার দিকে তার মরদেহ নিজ বাসভবন কাজীপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।
এদিকে, নুরজাহান ইসলাম নীরার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে যশোরের রাজনৈতিক অঙ্গণে শোকের ছায়া নেমে আসে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনসহ তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মীরা ছুটে যান হাসপাতালে। পরে মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার, যশোর পৌরসভার মেয়র হায়দার গনি খান পলাশসহ নেতাকর্মীরা ছুটে যান বাড়িতে। নেতাদের মধ্যে আরও ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম আফজাল হোসেন ও মীর জহুরুল ইসলাম, ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, যশোর জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি হারুনার রশিদ, যশোর জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য দেলোয়ার হোসেন খোকন, সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ ও সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম, লেবুতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান মিলন, চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ। নেতৃবৃন্দ শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন।
নুরজাহান ইসলাম নীরা গত বছরের ২০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত যশোর সদর উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে নৌকা প্রতীকে দু’ লাখ ৬৩ হাজার ছয়শ’ ২৫ ভোটের ব্যবধানে প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী নুর উন নবীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। নির্বাচনের দু’দিন আগে ১৮ অক্টোবর রোববার সন্ধ্যায় দেয়াড়া ইউনিয়নে এক নির্বাচনী সমাবেশ শেষে শহরে ফিরে আসার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন নুরজাহান ইসলাম নীরা। সহকর্মীরা দ্রুত তাকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করেন। কিন্তু, অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে খুলনায় স্থানান্তর করেন। সাথে সাথে তাকে খুলনায় নিয়ে ফর্টিস হার্ট ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে নির্বাচনের আগের দিন রাতে যশোর ফিরে আসেন তিনি।
নির্বাচনের পর ২২ অক্টোবর নুরজাহান ইসলাম নীরা ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২৪ অক্টোবর এনজিওগ্রাম করানোর পর তার হার্টে একাধিক ব্লক ধরা পড়ে। ওই দিনই তার হার্টে রিং পরানো হয়।
আজ বৃহস্পতিবার তিনি নিজের বাড়িতে আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যরা সাথে সাথে তাকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানেই মাত্র ২৫ মিনিটের ব্যবধানে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের সৈনিক হিসেবে নুরজাহান ইসলাম নীরা দীর্ঘ ৪১ বছরেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৮০ সালে যশোর সরকারি এমএম কলেজে পড়া অবস্থায় তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। পরবর্তীতে এই সংগঠনের যশোর জেলা কমিটির সহসম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ছাত্র রাজনীতি শেষ করে ১৯৯২ সালে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে এই সংগঠনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যশোর পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন। নুরজাহান ইসলাম নীরা যশোরের রাজপথের একজন লড়াকু সৈনিক হিসেবে পরিচিত।
স্বৈরাচার, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনসহ যশোর উন্নয়নের যে কোনো আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রসৈনিক।
এদিকে তার মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানিয়েছে।