খবরাখবর ডেস্ক: ইউটিউব চ্যানেলের কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণ ও দেখভালের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ইউটিউবের স্থানীয় সব চ্যানেল নিবন্ধনের আওতায় আনার কথা ভাবা হচ্ছে। দেশে বড় কোনো ঘটনা তদারকির জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হবে। অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কনটেন্ট বিষয়ক যে কোনো সমস্যা দ্রুত সমাধানে বাংলাভাষী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। সাবহানাজ রশীদ দিয়া নামের ওই কর্মকর্তা ফেসবুকের বাংলাদেশের অংশ দেখাশোনা করবেন।
মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর গণমাধ্যমকে ইউটিউবের স্থানীয় সব চ্যানেল নিবন্ধনের আওতায় আনার কথা জানান কমিটির প্রধান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এ ছাড়া ভার্চুয়ালভাবে বৈঠকে যুক্ত হন আইন মন্ত্রী আনিসুল হক এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী। বৈঠিকে অংশ নেন পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের মহাপরিচালক, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, দেশের বড় কোনো ঘটনা সঠিকভাবে তদারকির প্রয়োজনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হবে। দেশে বড় কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই সংক্রান্ত প্রতি এই কমিটির কাছে জমা দেবে। বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসে যে, ইউটিউব চ্যানেল খুলে যে যার মতো কনটেন্ট ছেড়ে দিচ্ছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে।
প্রচলিত গণমাধ্যমের মতো চ্যানেলগুলো মনিটর করা সম্ভব হচ্ছে না বলে এক ধরনের ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই চ্যানেলগুলোকে নজরদারির আওতায় আনার প্রয়োজনীয়তার ওপর বৈঠকে জোর দেওয়া হয়। স্থানীয় ইউটিউব চ্যানেলগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনার কথা ভাবা হচ্ছে বলে বৈঠকে জানান কমিটির প্রধান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এর আগে দেশে অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোকে সরকার নিবন্ধন এর আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয়। যার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দেশের সকল প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার অনলাইন সংস্করণ, এমনকি ফেসবুক টিভি চ্যানেল গুলোকেও নিবন্ধনের আনার কাজ চলছে। তবে এখন দেখার বিষয় কতটা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে দিয়ে সরকার কাজটি করতে পারে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কনটেন্ট বিষয়ক যে কোনো সমস্যা দ্রুত সমাধানে বাংলাভাষী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। সাবহানাজ রশীদ দিয়া নামের ওই কর্মকর্তা ফেসবুকের বাংলাদেশের অংশ দেখাশোনা করবেন।
সোমবার সিঙ্গাপুরে ফেসবুকের আঞ্চলিক সদর দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। এ সময় ফেসবুকের পক্ষ থেকে সাবহানাজ রশীদ দিয়ার নিয়োগের তথ্য জানানো হয়।
পরে মোস্তাফা জব্বার সাংবাদিকদের বলেন, কনটেন্ট বিষয়ে বিদ্যমান যে কোনো সমস্যা দ্রুত সমাধানসহ বাংলাদেশের অংশ দেখাশোনার জন্য একজন বাংলাদেশি বাংলাভাষীকে নিয়োগ দিয়েছে ফেসবুক। বাংলাভাষী নিয়োগ দেওয়ার ফলে তার সঙ্গে খুব সহজে যোগাযোগ করা যাবে এবং যে কোনো বিষয়ে দ্রুত সাড়া পাওয়া যাবে।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ফেসবুকের সম্পর্ক রক্ষাসহ এনজিও ও আই-এনজিও, টেক কোম্পানি এবং সিভিল সোসাইটির সঙ্গে ফেসবুকের সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো তিনি দেখবেন।
এই পদক্ষেপ গ্রহণকে একটি ফলপ্রসূ উদ্যোগ বলে উল্লেখ করে ফেসবুককে ধন্যবাদ জানান মোস্তাফা জব্বার।
প্রায় ৩ ঘণ্টার এই বৈঠকে নানা বিষয়ে আলোচনার মধ্যে নাগরিক সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যয়ের বিষয়টি প্রাধান্য পায়।
মন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠকে ফেসবুকের হেড অব সেফটি বিক্রম সেন, ফেসবুক পাবলিক পলিসি বিষয়ক পরিচালক অশ্বিনী রানা, ফেসবুকের নবনিযুক্ত বাংলাদেশ বিষয়ক কর্মকর্তা সাবহানাজ রশীদ দিয়া এবং ফেসবুক মোবাইল পার্টনার বিভাগের ইরাম ইকবাল আলোচনায় অংশ নেন।
সাবহানাজ রশীদ দিয়াকে গত এপ্রিলে নিয়োগ দেয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। গত সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি জনসমক্ষে প্রকাশ হয়।