কাল নয়তো বা পরশু
সেইথেকে প্রায়ই এভাবেই খুলে রাখি
শোবর ঘরের জানালাটা
আর সময় করে জানালা কূল ঘেষে বসে থাকি
সবুজের গহীনে দখিনের ঝিরঝিরে
হওয়া যদি বয়ে নিয়ে আসে তোমার
আগমনি বার্তার সুবাসিত ঘ্রাণ ; সে অপেক্ষায় ।
আর চেয়ে থাকি ও পথো পানে,
চাঁদের স্নিগ্ধতায় পুড়ে মরেছে কতবার,
মুগ্ধতার চোখ তোমার প্রতীক্ষা নিয়ে।
তুমি শুনোনি সে বাণী?
মিলনে যতটা না ভালোবাসা
তার চেয়ে অধিক ভালোবাসা থাকে প্রতীক্ষায়,
শীতের আগমনে আজকাল
উত্তরীয় বায়ু বইতে শুরু করেছে
এ হৃদয় শুধু খুঁজে ফিরে, তোমার হৃদয়ের ওম ।
আমি রোজ চা হাতে তোমাতে মিশে যাই
বুদ হয়ে অবচেতনায় বাতাসে,
কান পেতে থাকি মাতালের মতো!
বিজ্ঞানীদের গবেষণায় বহুবার
উঠে এসেছে এটা যে,
বাতাসে নাকি মিশে আছে
প্রতিটি মানুষের কথার প্রতিধ্বনি
যা কখনো বিনষ্ট হয়ে বিলুপ্ত হয় না।
আমি যেন আনমনে শুনি
তোমার কথার প্রতিধ্বনিত শব্দ
আমি তাই রোজ নিজেতে হারাই
বিগত সাময়িকীর তোমাতে মিশে যেতে।
তুমি আজ নাহয় কাল
নয়তো’বা পরশু একবার এসো ….
খুব প্রাসঙ্গিক হয়েই,
হয়ে যাও স্থায়ীভাবেই আমার জীবনের বর্তমান।
আসবে তো..? বলো না…?
হৃদয়ের সৈকত
আজকাল কী তুমি আকাশ দেখো ?
চলে যেতে যেতে সোনালি হলুদে-
মোড়ানো বিকেলে আবীর বলে গেছে
যে কথা তুমি কী তা শুনেছিলে ?
হেমন্তের এই শেষ ভাগে এসে
এসময় তো কখনো বৃষ্টি হওয়ার কথা নয়
অথচ দেখ, অঝোরে ঝরা বদল
কী তুমুল ভাবে ভিজিয়ে
ভাসিয়ে দিয়ে গলো তোমার আমার শহর।
এক বরষায় খুব অল্প সময়ের জন্য
দেখা হয়েছিলো তোমার আমার–
কী মাদকতা ছিলো সে দেখায়,
কী মায়ার টান ছিলো সে রোদেলা বৃষ্টিতে!
দুজনে হাতধরে ঝুমবৃষ্টিতে ভিজবো বলে
তুমি খুঁজেছিলে একগুচ্ছ কদম।
এরপর পুরো বরষা চলে গেলো
একফোঁটা বৃষ্টিও নামেনি শহরের কোথাও
এমনকি রৌদ্রোজ্বল ঝলমলে আকাশ কোণে
একফোঁটা মেঘের দেখা মেলেনি সে সময়
এতো খোঁজাখু্ঁজির পরও যখন পেলে না
তখন ধরেই নিলে ——–
সে বার হয়তোবা একটা কদম কলিও
ফুটেনি কোন গাছের শাখায়
আর তাই বৃষ্টিতে ভেজাও হলোনা একসাথে দুজনার।
অথচ আজ এ অসময়ের বৃষ্টিতে
যেন বিষাদের এক বর্ষণে ভিজে যাচ্ছে শহর
ভিজে যাচ্ছি ভিতরে বাহিরে আমি নিজেও,
ভিজে যাচ্ছে ফুল শূন্য কদম ডাল
প্রবল বর্ষণে ভিজে ভাঙছে বন শালিখের ঘর
তুমিহীন এক বাতাসের মাতনে
সকাল বিকেল বুকের গহীনের তুমুল ঝড়,
আমাকে বয়ে নিয়ে যায়,
তুমি নেই কোথাও — সেই বিরহানলে।
পৌষালি কুয়াশায় শুষ্ক মরুময় মনোকানন
কেবল চোখের ভেতর উপছে পড়া জলের অথৈ
সেই জলে ভিজে বুক ভাসে
তবুও ভিজে ভাসে না তৃষিত মন,
একবার নাহয় চলে এসেই
তুমিহীন অভাবটা ঘুচিয়ে দিয়ে–
ভাসিয়ে নিয়ে যাও ভিজিয়ে হৃদয়ের সৈকত।
গভীরতার নাগালে
ভেবে নিয়েছিলাম কিছুটা এভাবে
আমার বাস হয়তোবা —-
তোমার হৃদয়ের খুব কাছাকাছি,
ও হৃদয়ের কূল ঘেষে আমার রয়ে থাকা,
অথচ দেখলাম এখনো,
এক আকাশ দূরত্ব তোমার আমার মাঝে।
এক পৃথিবী কথা বলবো বলে
জমিয়েছিলাম কথার প্রহর শব্দের বহরে
অথচ তুমি নেই তোমার থাকা জুড়ে,
আজো যেন নিঃসীম শূন্যের চেয়েও
দূরত্বে তোমার বাস; যেন পুষি
এক আকাশ দূরত্ব তোমার আমার মাঝে।
এইসব দিনরাত্রি পেছনে ফেলে রেখে
কবিতায় ছাইপাঁশ অক্ষরে করবো মনোনিবেশ
লিখে লিখে খেরোখাতায়
বিষন্নপ্রহরের রোজনামচা,
ডেকে নেবো মেঘপিয়ন
আর বললো ; তারে বলে দিও..
একেবারে চলে গেলেও সে
কী ভীষণ ভাবে রয়ে যায়;
তার সমস্ত না থাকা জুড়ে,
নকশিকাঁথার এফোঁড়ওফোঁড়ের-
মতো হৃদয় ভেদক হয়ে।
আর কোনদিন যদি দেখা মেলে তার
তবে বললো তারে….
যদিও তুমি রও গভীরতার নাগালে ;
অথচ যথারীতি এক আকাশ দূরত্ব
সে রয়েই গেলো তোমার আমার মাঝে।