সুপার সাইক্লোনে রুপ নিচ্ছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, লক্ষীপুর ও চাঁদপুরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ফেনীতে ৬ নং বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।বঙ্গোপসাগরে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রুপ নিচ্ছে সাইক্লোনে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে শক্তি সঞ্চয় করে ক্রমান্বয়ে এগিয়ে আসছে ঘূণিঝড়। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের খবরে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঝড় আম্পান আগামী দু’দিনের মধ্যে প্রলয়ঙ্করী রূপ নিতে পারে; তখন ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ১৪৫ থেকে ১৭০ কিলোমিটার অথবা তার চেয়ে বেশি ১৭০ থেকে ২০০ কিলোমিটার গতিবেগ নিয়ে আঘাত হানতে পারে উপকূলে। বাংলাদেশের ২ টি সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
১৭ মে রোববার ভারতের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে , আম্পান আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে (সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম) রুপ নিতে পারে। ১৮ মে সকালের মধ্যে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। অতি প্রবল হয়ে উঠলে এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ১৭০ কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় আম্পান মঙ্গলবার নাগাদ আরও শক্তি সঞ্চয় করে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। সেই সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে। এ সময় ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটার কিংবা তারও বেশি বেগে বাতাস বইতে পারে।
এর আগে ভারতের আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় আম্পান রোববার বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল থেকে উত্তর-উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের দিকে অগ্রসর হতে পারে। এরপর ১৮ থেকে ২০ মের মধ্যে সেটি পশ্চিমবঙ্গ এবং তার আশপাশেট ওড়িশ্যা উপকূলের দিকে মোড় নিতে পারে। ওড়িশ্যার বিভিন্ন প্রান্তে হালকা থেকে তীব্র বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে ১৮ মে সন্ধ্যা থেকে।
ভারতীয় আবহাওয়া দফতর আরো বলেছে, আগামী ১২ ঘণ্টায় বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং তার পার্শ্ববর্তী মধ্যাঞ্চলে সাগর উত্তাল হয়ে উঠবে। সোমবার থেকে আগামী ২০ মে পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের উত্তরাঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশ্যা এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় জেলেদের মাছ ধরা ও নৌকা চলাচল থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
ভারতের আবহাওয়া দফতরের খবরে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আম্পান বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের দীঘার ১ হাজার ১৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিম,
বঙ্গোপসাগরে ওড়িশ্যা প্রদেশের প্যারাদ্বীপের ৯৮০ কিলোমিটার দক্ষিণে, এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে এক হাজার ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আন্দামান ও নিকোবোর দ্বীপপুঞ্জে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে।
এদিকে, মার্কিন নৌবাহিনী পরিচালিত প্রতিষ্ঠান জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার বলেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের ক্যাটেগরি ৩ মানের। এই ক্যাটেগরির ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় ১৭৮ থেকে ২০৮ কিলোমিটর। ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর এত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশ উপকূলে আর আঘাত হানেনি। বাংলাদেশে আঘাত হানা সিডরের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৬০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড় সিডর উপকূলীয় ১৯টি জেলা লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল।
বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণিঝড়টি রোববার প্রবল রূপ ধারণ করায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশ্যা প্রদেশে আঘাত হানবে। এ কারণে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর (এনডিআরএফ) ১৭টি টিম মোতায়েন করা হয়েছে ঐ অঞ্চলে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে এ খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। এনডিআরএফের সাতটি টিম মোতায়েন রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ছয়টি জেলায়। এই জেলাগুলো হলো- উত্তর ২৪ পরগনা, ২৪ পরগনা,পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর, , হাওরা ও হুগলি। এছাড়া ওড়িশ্যার সাতটি জেলায় মোতায়েন করা এনডিআরএফ এর ১০টি টিম।
দেশটির জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনীর এসব সদস্যরা ঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটনা কমিয়ে আনতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফান এর প্রভাবে বাংলাদেশের খেপুপাড়া ও আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করা হয়েছে। তবে এ জন্য বাংলাদেশের তেমন কোন প্রস্তুতির খবর পাওয়া যায়নি। এদিকে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলে বসবাসকারীদের সাবধানে থাকতে বলা হয়েছে।২ টি সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সমুদ্রে মাছধরা ট্রলার ও নৌকাগুলোকে মাছধরা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে সারাদেশে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত দেশের সবগুলো নদীবন্দর গুলোকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে উপকূলের সকল জনগণকে।