1. admin@khoborakhobor.com : খবরাখবর :
ধার করা সন্তান দেখিয়ে ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটিতে শিক্ষিকা - খবরাখবর
শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ০২:৪৫ অপরাহ্ন

ধার করা সন্তান দেখিয়ে ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটিতে শিক্ষিকা

  • Update Time : শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২
সংগৃহীত ছবি
সংগৃহীত ছবি

প্রতিবেশীর সন্তানকে নিজের দেখিয়ে ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক সহকারী শিক্ষকার উপর। কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই শিক্ষিকা চলতি বছরের ১৪ মার্চ থেকে মাতৃত্বকালীন ছুটি ভোগ করছেন।

অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের নাম নাম আলেয়া সালমা শাপলা। তিনি নাগেশ্বরী উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের মুনিয়ারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। সন্তান জন্ম না দিয়েও মাতৃকালীন ছুটি নিয়ে চলতি বছরের ১৪ মার্চ থেকে অভিযুক্ত শিক্ষিকা বগুড়ায় তার স্বামীর বাড়িতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাদিজা সুলতানা, উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী ও হিসাবরক্ষক আজিজার রহমান, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু নোমান মো. নওশাদ আলীর যোগসাজশে প্রতিবেশীর সন্তান দেখিয়ে ওই শিক্ষিকা ছুটি নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসব জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে জানা গেছে। তবে অভিযুক্তদের প্রত্যেকে এসব অস্বীকার করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বদলি সূত্রে ২০১৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি মুনিয়ারহাট বিদ্যালয়ে যোগদান করেন আলেয়া সালমা। ২০১৯ সালে বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কাগইল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক শফি আহমেদ স্বপনকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পর থেকে বগুড়ায় চলে যান আলেয়া সালমা। এরপর করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরও তিনি স্কুলে যাননি। এ সময় চিকিৎসাসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে ছুটি নিয়েছেন তিনি। মাঝেমধ্যে ছুটি নিতে এবং অফিসিয়াল কাজে ওই শিক্ষিকা স্কুলে আসতেন। চলতি বছরের ১৪ মার্চ সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য দিন দেখিয়ে গত ১৩ মার্চ থেকে ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন করেন তিনি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ছুটিতে রয়েছেন তিনি। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর তার ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে গর্ভকালীন সালমার কোনো শারীরিক পরিবর্তন বিদ্যালয়ের সহকর্মীদের নজরে পড়েনি। এ কারণে ১৩ মার্চ কোলে শিশুসন্তান নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসে হাজির হন আলেয়া। কোলের সন্তানকে নিজের দাবি করে মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন করেন ওই শিক্ষিকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে সন্তানকে দেখিয়ে আলেয়া সালমা ছুটি ভোগ করছেন সেই শিশুর আসল মায়ের নাম শারমিন বেগম। শারমিনের স্বামীর নাম আনিছুর রহমান পাশা। তারা আলেয়ার বর্তমান স্বামীর প্রতিবেশি ও দূর সম্পর্কের আত্মীয়। মার্চে শারমিনকে বেড়ানোর কথা বলে নাগেশ্বরী নিয়ে এসে তার সন্তানকে শিক্ষা অফিসে দেখিয়ে মাতৃত্বকালীন ছুটি নেন ওই শিক্ষিকা।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ওই শিশুর আসল মা শারমিন জানান, ওনার সাথে কুড়িগ্রামে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার বাচ্চাকে দেখিয়ে ছুটি নিয়েছে সেটা আমি কিভাবে বুঝবো।

তিনি আরও বলেন, তার বড় মেয়ের নাম আফিফা। বয়স পাঁচ বছর। আর ছোট মেয়ের নাম আশফিয়া। মার্চ মাসে আশফিয়ার জন্ম হয়েছে।

মুনিয়ারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে সেখানকার ছাত্রদের অভিভাবকরা জানান, মাঝেমধ্যে স্কুলে আসতেন আলেয়া সালমা। কিন্তু কখনও তাকে দেখে সন্তানসম্ভাবা মনে হয়নি।

অভিভাবক ফরিদুল ইসলাম, আব্দুল মমিন, ফরিদা বেগম জানান, আলেয়া আপা স্কুলে কম আসতেন। মাঝেমধ্যে আসলেও তাকে কখনও গর্ভবতী দেখা যায়নি। তিনি ভুয়া সন্তান দেখিয়ে ছুটি নিয়েছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও অফিসাররা মিলে তাকে ছুটি ম্যানেজ করে দিয়েছেন।

বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নাগেশ্বরী থাকা অবস্থায় তিনি আসতেন। তবে বগুড়া যাওয়ার পর তাকে আর আসতে দেখতাম না। সন্তান হওয়ার বিষয়টি তারা শুধু শুনেছেন, দেখেননি।

এ বিষয়ে বগুড়ায় স্বামীর বাড়িতে থাকা আলেয়া সালমা মুঠোফোনে বলেন, আমার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। করোনার সময় বাচ্চাটা পেটে আসে। এজন্য কেউ কিছু জানে না।

গত ৭ জুন ওই সন্তানটি মারা গেছে দাবি করে আলেয়া বলেন, আমার কাছে সব কাগজপত্র রেডি আছে। ১৪ তারিখে ছুটি শেষে অফিসে জমা দেব।

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক খাদিজা সুলতানা কেয়া বলেন, ওই সময় তিনি বলেছিলেন তার পেটে বাচ্চা। ডাক্তারের সার্ফিফিকেট জমা দিয়েছে। তিনি কোনো অন্যায় করলে ডিপার্টমেন্ট ব্যবস্থ নেবে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী ও হিসাবরক্ষক আজিজার রহমান বলেন, এ বিষয়টি প্রধান শিক্ষককের জানার কথা। তিনি অফিসে কাগজপত্র দিয়েছেন। এরপর ছুটি হয়েছে। ভেতরের খবর তো আমরা জানি না।

ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আবু নোমান মো. নওশাদ আলী বলেন, তাকে বিধি অনুযায়ী মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হয়েছে। ওই শিক্ষককে সন্তানসম্ভাবা দেখেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন।

নাগেশ্বরী উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মোবাশ্বের আলী বলেন, স্বাভাবিকভাবে যেভাবে ছুটি দেয়া হয় তাকে সেভাবে ছুটি দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকের কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। সে আলোকে ছুটি দেয়া হয়েছে। যদি তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকেন তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা মো. শহিদুল ইসলাম জানান, আমি কয়েকদিন আগে বিষয়টি জেনেছি। এরপর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিতে বলেছি। প্রতিবেদনের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

© khoborakhobor.com All rights reserved
Designed by khoborakhobor@team