খবরাখবর ডেস্কঃ আগামী দুই মাসের মধ্যে অবৈধ সব গ্যাস সংযোগ অপসারণের নির্দেশ দিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। এছাড়া নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায় মসজিদে আগুন লাগার ঘটনায় তিতাসের আট কর্মকর্তা কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) গ্যাস বিতরণ সংস্থাগুলোর কার্যক্রম নিয়ে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রতিমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী দুই মাসের মধ্যে অবৈধ সব গ্যাসলাইন অপসারণ করতে হবে। পরিকল্পিত এলাকার বাইরে বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংযোগ দেয়া যাবে না। অকুপেন্সি সার্টিফিকেট অনুসারে সংযোগ না নিলে দ্রুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন।’
তিনি বলেন, ‘কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অসদাচরণের জন্যই রাজনীতিবিদদের বা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। কোন বিভাগের কোন কোন কর্মকর্তা অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত তাদের তালিকা করা হচ্ছে। কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলে প্রথমে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে পরে অভিযোগ তদন্তের ব্যবস্থা নিন।’
‘ট্রান্সমিশন লাইনের ওপর কোনো বিল্ডিং বা স্থাপনা থাকলে দ্রুত অপসারণ করতে হবে। গ্যাসের বকেয়া বিল সংগ্রহের টাইমলাইন নির্ধারণ করুন।’
এ সময় বিলখেলাপিদের তালিকা হালনাগাদ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোরও নির্দেশ দেন প্রতিমন্ত্রী।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ইভিসি মিটার এবং প্রি-পেইড মিটার সব গ্রাহকের জন্য স্থাপন করতে হবে। অটোমেশন করার প্রক্রিয়াও ধীরগতিতে চলছে, যা কাঙ্ক্ষিত নয়। টাস্কফোর্সের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে হবে।’
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় মর্মাহত জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ফতুল্লা এলাকায় যারা দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। তাদের শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।’
ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এ বি এম আবদুল ফাত্তাহ ও বিতরণ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ফতুল্লা অফিসের আট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিতাসের ফতুল্লা অফিসের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপক মাহমুদুর রহমান রাব্বী, সহকারী প্রকৌশলী এস এম হাসান শাহরিয়ার, সহকারী প্রকৌশলী মানিক মিয়া, সিনিয়র সুপারভাইজার মো. মনিবুর রহমান চৌধুরী, সিনিয়র উন্নয়নকারী মো. আইউব আলী, সাহায্যকারী মো. হানিফ মিয়া এবং প্রো-কর্মী মো. ইসমাইল প্রধানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে মসজিদের ভেতরে থাকা প্রায় ৫০ জনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হুড়াহুড়ি করে বের হওয়ার চেষ্টা করেন তারা।তাদের মধ্যে দগ্ধ ৩৭ জনকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে এ পর্যন্ত ২৭ জন মারা গেছেন। বর্তমানে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ৯ জন। দগ্ধদের মধ্যে কেবল মামুন (৩০) নামের একজন ছাড়পত্র পেয়েছেন।প্রথম দিকে এসি বিস্ফোরণের ফলে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেলেও পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেন, এসি নয় গ্যাসলাইন থেকে মসজিদে বিস্ফোরণ ঘটেছে।
তবে মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, মসজিদের নিচ দিয়ে গ্যাসের পাইপ গেছে। প্রায়ই গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যেত। তিতাসের কর্মকর্তাদের জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেননি।
এ ঘটনায় ওইদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রথম মৃত্যু হয় জুয়েল নামের এক শিশুর। মৃতের তালিকায় রয়েছেন মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনও। রোববার রাতে মারা যান মসজিদের ইমাম।
শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেল পর্যন্ত ১২ জনের মরদেহ নারায়ণগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ১০টা পর্যন্ত এক শিশুসহ ১০ জনের জানাজা শেষে দাফন করা হয়। চোখের জলে প্রিয়জনকে দাফন করেন স্বজনরা।