কখনো বহুমূত্র, কখনো পিঠের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রফিকুল আমিন। মাস দুয়েক হাসপাতালে থেকে আবারও কারাগারে ফিরে যান তিনি। সর্বশেষ এ বছরের এপ্রিলে ডায়াবেটিসের কথা বলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি হন রফিকুল আমিন। এখনো তিনি সেখানেই আছেন।
তবে, রফিকুল আমিন শুধুমাত্র কাগজে-কলমে কিংবা চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে ‘অসুস্থ’। হাসপাতালে থেকে দিব্যি ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন তিনি।
জানা গেছে রফিকুল আমিন ডেসটিনির মতোই নতুন আরেকটি এমএলএম ব্যবসার বিষয়ে আলোচনা করছেন। ইতোমধ্যে সেই ব্যবসা শুরুও করেছেন তিনি। ব্যবসার জন্য শিগগিরই ১৩০০ মার্কেটিং এজেন্ট নিয়োগের কথা বলেছেন।
তার জুম মিটিংয়ের রেকর্ড করা ভিডিও এখন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভিডিওতে রফিকুল আমিনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি সেখানে ‘মিস্টার এ’ নামে রেজিস্ট্রি করেছেন। তার প্রোফাইল ছবিতে ইংরেজি বর্ণের বড় হাতের ‘R (আর)’ লেখা। ব্যবসার বিষয়ে আলাপকালে তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে তাকে কথা বলতে শোনা গেছে।
ডায়াবেটিসসহ বেশ কয়েকটি রোগের কারণে তাকে আমরা হাসপাতালে পাঠাই। বর্তমানে তিনি কী কারণে হাসপাতালে আছেন, সেটা তার চিকিৎসকরা বলতে পারবেন
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুব আলম
এছাড়া নতুন ব্যবসায় ধীরগতির বিষয়ে মিটিংয়ে রফিকুল আমিন বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে (কারাগারে) যাওয়ার কারণে সেই কাজটা পিছিয়ে গেছে।’ এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জেলে থেকে কোরআন-হাদিসের অনেক জ্ঞান নিয়েছি।’
রফিকুল আমিন কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। তবে, ডায়াবেটিসের সমস্যার কথা বলে এপ্রিলে তিনি বিএসএমএমইউতে ভর্তি হন। হাসপাতালে চিকিৎসকের অধীনে থাকলেও তার নিরাপত্তায় কেন্দ্রীয় কারাগারের দুজন রক্ষী সবসময় দায়িত্ব পালন করেন।
তারপরও কীভাবে মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ পেলেন তিনি— জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুব আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘তিনি (রফিকুল আমিন) ডায়াবেটিসের কথা বলে দুই মাসের বেশি সময় ধরে বিএসএমএমইউতে ভর্তি আছেন। সেখানে প্রিজনার্স সেলে আছেন তিনি। আমাদের কারারক্ষীরা সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন।’
আমি আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) অফিসে গিয়ে দেখব কীভাবে, কী হচ্ছে। আমাদের কাছে এমন একটা তথ্য আগেও এসেছিল। এরপর আমরা যে ব্যবস্থা নিয়েছি তাতে মোবাইলে কথা বলার সুযোগ নেই। আগামীকাল গিয়ে আবারও বিষয়টি দেখব
বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম
‘ডায়াবেটিসসহ বেশ কয়েকটি রোগের কারণে তাকে আমরা হাসপাতালে পাঠাই। বর্তমানে তিনি কী কারণে হাসপাতালে আছেন, সেটা তার চিকিৎসকরা বলতে পারবেন।’ এ বিষয়ে বিএসএমএমইউয়ের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন জেলার মাহবুব।
জানতে চাইলে বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি আমাকে এ বিষয়ে আরেকজন জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তার কাছে ফোন গেছে কী করে… এটা তো হওয়ার কথা নয়।’
পরিচালক জুম মিটিংয়ের ভিডিওর তারিখ জানতে চাইলে এই প্রতিবেদক সেটি জানান। এরপর তিনি বলেন, ‘আমি আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) অফিসে গিয়ে দেখব কীভাবে, কী হচ্ছে। আমাদের কাছে এমন একটা তথ্য আগেও এসেছিল। এরপর আমরা যে ব্যবস্থা নিয়েছি তাতে মোবাইলে কথা বলার সুযোগ নেই। আগামীকাল গিয়ে আবারও বিষয়টি দেখব।’
এর আগে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ থেকে ২০২০ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রায় ১৬ মাস রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন রফিকুল আমিন। ওই সময় তিনি বহুমূত্র ও পিঠে ব্যথার কারণ দেখিয়েছিলেন। কারা কর্তৃপক্ষ ২৭ বার চিঠি দিলেও তাকে কারাগারে পাঠায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে অবশ্য তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এছাড়া ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে পেটে ব্যথার কারণ দেখিয়ে চার মাস বারডেম হাসপাতালে ছিলেন রফিকুল আমিন। ওই সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার বড় কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি। সর্বশেষ পিএলআইডি-জনিত (লোয়ার ব্যাক পেইন) সমস্যার কথা বলে হাসপাতালে থেরাপি নেন তিনি।
২০১২ সালের ৩১ জুলাই রাজধানীর কলাবাগান থানায় ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিন এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই বছরের ১১ অক্টোবর গ্রেফতার হন রফিকুল আমিন ও মোহাম্মদ হোসেন। ২০১৪ সালের ৪ মে দাখিল করা অভিযোগপত্রে আসামি করা হয় মোট ৫৩ জনকে। তাদের বিরুদ্ধে চার হাজার ১১৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ এবং ৯৬ কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচারের অভিযোগ আনা হয়। গ্রেফতারের পর থেকে কারাগারে আছেন রফিকুল আমিন।
বিভিন্ন সময় জামিন চেয়ে আদালতে আবেদন করেন তারা; উচ্চ আদালতেও যান। কিন্তু আদালত তাদের জামিন দেননি। বর্তমানে একটি মামলায় তিন বছরের সাজাসহ বেশ কয়েকটি বিচারাধীন মামলায় কারাবন্দি আছেন রফিকুল আমিন।