খবরাখবর ডেস্কঃ হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া পদটি দ্রুত সময়ের মধ্যে পূরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী।
শনিবার বিকালে হাটহাজারী মসজিদের মাইকে জানাজার পূর্বে তিনি এ ঘোষণা দেন।
জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘আল্লামা শফী হুজুর আমাদের মুরুব্বি। আমরা উনার জন্য দোয়া করছি। আর আপনারা জানেন, হেফাজতে ইসলামের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। আল্লামা শফী হুজুরের মৃত্যুতে হেফাজতে ইসলামের আমির পদটি শূন্য হয়ে যায়। আমরা হুজুরের (আল্লামা শফী) জানাজা-দাফন শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে হেফাজতে ইসলামের সম্মেলন ডাকব। সম্মেলনে আমরা সর্বসম্মতিক্রমে হেফাজতে ইসলামের আমির নির্বাচন করব।’
উল্লেখ্য, গত ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি দারুল উলুম হাটহাজারী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওলামা সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ গঠন করা হয়। আহমদ শফী এর প্রতিষ্ঠাতা আমির মনোনীত হন। এরপর ২০১১ সালে তার নেতৃত্বেই ‘নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরুদ্ধে’ চট্টগ্রামে কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। তখন ঢাকায় শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক, মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বে ঢাকায় আন্দোলন হয়। ২০১২ সালে এই দুই নেতা মারা যাওয়ার মধ্য দিয়ে ঢাকার আলেমদের মধ্যে এক ধরনের নেতৃত্বহীনতা সৃষ্টি হয়।
নানা চরাই-উৎরাই পাড়ি দিয়ে সংগঠনটি গুছিয়ে আনার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আল্লামা আহমদ শফী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।
এদিকে হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের আমির ও দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার সাবেক মহাপরিচালক আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর নামাজের জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
আজ শনিবার জোহরের নামাজের পর দুপুর ২টায় হাটহাজারী মাদ্রাসা মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে হাটহাজারী মাদ্রাসা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে বায়তুল আতিক জামে মসজিদের সামনের কবরস্থানে আল্লামা শফীকে দাফন করা হয়।
জানাজায় ইমামতি করেন আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বড় ছেলে মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ। স্মরণকালের সবচেয়ে বড় এই জানাজায় আলেম, রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে কয়েক লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ অংশ নেন।
শনিবার দুপুরে এই জানাজাকে কেন্দ্র করে লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা সংলগ্ন হাটহাজারী এলাকা। চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে এসে মানুষ এই জানাজায় অংশ নেয়। জানাজায় অংশ নেওয়া মানুষের সারি কয়েক কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায়।
জানাজা শেষে হাটহাজারী আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার ভেতরের বায়তুল আতিক জামে মসজিদ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ সময় শতবর্ষী আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সহকর্মী, ছাত্র, ভক্ত ও অনুসারীসহ জানাজায় আসা ধর্মপ্রাণ মানুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এর আগে শনিবার সকাল ১০টায় তার মরদেহবাহী গাড়িটি মাদরাসা প্রাঙ্গণে এসে পৌঁছায়। এসময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
আল্লামা শফীর মৃত্যুর খবরে শুক্রবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসেন লাখো ভক্ত অনুসারী। মুকুটহীন এ সম্রাটের মরদেহ পৌঁছানোর আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসা প্রাঙ্গণসহ পুরো হাটহাজারী এলাকা।
উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর আসগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
বার্ধক্যজনিত কারণে অনেকদিন ধরে নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। গত কয়েক বছরে তিনি বেশ কয়েকবার দেশ ও দেশের বাইরের হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
বৃহস্পতিবার ছাত্রবিক্ষোভের মুখে অবরুদ্ধ অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। মাদরাসার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেয়ার পর বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে চট্টগ্রাম হাসপাতালে নেয়া হয়।
শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা আল্লামা শফীকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে শুক্রবার সন্ধ্যার আগে ঢাকায় এনে আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।