ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুদ্ধ হচ্ছে। আঘাত হানতে পারে ২৫ মে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে ২৬ মে’র মধ্যে। এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় যশোরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির উদ্যোগে এ প্রাকৃতিক দুর্যোগ পূর্ব ও পরবর্তী যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হচ্ছে।
দুর্যোগে মানুষের সেবায় প্রস্তুত রয়েছেন রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির দেড়শ’ স্বেচ্ছাসেবক। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রি সংগ্রহে রাখা হয়েছে।
যশোর সদর উপজেলা ইতোমধ্যে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’মোকাবেলায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
১. যশোর সদর উপজেলার আওতাধীন সমস্ত স্কুল-কলেজ এবং মাদ্রাসা সার্বক্ষণিক খোলা রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে মানুষ নিরাপদে আশ্রয় গ্রহণ করতে পারে।
২. সমস্ত কমিউনিটি ক্লিনিকে পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন ও ঔষুধ মজুদ রাখতে এবং সার্বক্ষণিক খোলা রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৩. ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে গ্রাম পুলিশকে সর্বদা সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৪. টিউবওয়েল রক্ষণাবেক্ষণ ও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুদ রাখার জন্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী (জনস্বাস্থ্য) এবং ইউনিয়ন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি কর্তৃক পর্যাপ্ত পরিমান শুকনো খাদ্য, মোমবাতি এবং দিয়াশলাই মজুদ রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৫. পল্লী বিদ্যুৎ ও পিডিবি বিদ্যুৎ সংযোগ বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৬. বন বিভাগকে বিভিন্ন স্থানে গাছপালা সমূহ সঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৭. কৃষি বিভাগ কে কৃষকদের প্রয়োজনে ফসল সংগ্রহের পরামর্শ দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
৮. সমবায় বিভাগ কে গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপকারভোগীদের তাদের গৃহ সংস্কারের ব্যাপারে পরামর্শ প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
৯. জরুরি প্রয়োজনে উপজেলা কন্ট্রোল রুমের নাম্বার দেওয়া হয়েছে। ইউএনও অফিস টেলিফোন-০৪২১-৬৩৬৩৮, মোবাইল-০১৯৮৯৩৮৪২৫৩, ০১৭৬০৬০৭০৩৫,
০১৭১৯৯৭৪৬৩৭
এছাড়াও ১৫ টি ইউনিয়ন এবং ১ টি পৌরসভায় স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করা হয়েছে। জরুরী প্রয়োজনে স্ব স্ব ইউনিয়ন এবং পৌরসভায় গ্রুপ লিডারদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
১. হৈবতপুর ইউ: আবু সিদ্দিক- ০১৮২৩-৬৬৭১৩৩ ,লেবুতলা ইউ: তৌহিদুল ইসলাম- ০১৭১২-৭৬১৮১৩ ,ইছালী ইউ: মিথুন তরফদার- ০১৭১৭-২৮৬৭৪৮,নওয়াপাড়া ইউ: বি এম জাকির- ০১৭১১-২৮৮১৬৩,উপশহর ইউ: শফিকুল ইসলাম- ০১৭১২-৮৮৮৯৯০ ,কাশিমপুর ইউ: শাহারুল ইসলাম ০১৭২১-৫৮৬৮৮৫ , চুড়ামনকাটি ইউ: গোলাম মোস্তফা ০১৭২৪৫৮৪১৩৬ , দেয়াড়া ইউ: আমিন মেহেদী- ০১৭১৬-৫৭১০২৪ ,আরবপুর ইউ: ইসরাফিল সর্দার- ০১৬৩৭-২০২৪৩৩ , চাঁচড়া ইউ: আব্দু: আল মামুন- ০১৯৫৭-০৩২৪১২ , রামনগর ইউ: মেহেদি হাসান- ০১৮৭৩-৪৪১১২০ , ফতেপুর ইউ: জাহিদুর রহমান- ০১৭১৭-৮২৯৪৯৪ ,কচুয়া ইউ: অহিদুল তরফদার- ০১৯২০-২৯৮৮৯৬ , নরেন্দ্রপুর ইউ: আল মাহমুদ- ০১৯১১-৯৩০১২২ ,বসুন্দিয়া ইউ: হাবিবুল আহসান-০১৭১১-৩৫৫০৪৪ ,যশোর পৌর: রাকিবুল আলম- ০১৯২০-১১৭৮৯৩
ঘূর্ণিঝড়টি ঘণীভূত হয়ে ‘ইয়াস’ এ পরিণত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুদ্ধ রয়েছে। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে এগিয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৬২ কিলোমিটার যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়টি একই এলাকায় (১৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি অক্ষাংশ এবং ৮৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে) অবস্থান করছে।
আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন জানান, এই সময়ে সাগর উত্তাল রয়েছে। দেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসাথে তাদেরকে গভীর সমুদ্রে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
আজ সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দক্ষিলে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘণীভূত হয়ে উত্তর-উত্তর পশ্চিম দিকে এগিয়ে আসতে পারে।