কোন দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎই বা কি? যে সব শিক্ষার্থীরা ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ছুটিতে গিয়েছিল তারা কি আবার স্কুলে ফিরবে?
টানা ৪৫৪ দিন স্কুল-কলেজ তালাবন্ধ। এর মধ্যে অনেক স্কুল-কলেজের আঙ্গিনায় আগাছার বাগান হয়েছে। ঝড় বন্যায় ক্ষতি হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এসব ক্ষতি হয়তো পুষিয়ে নেয়া যাবে কিন্তু শিক্ষার পরিবেশ?
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, এক বছর পরীক্ষা না দিলে জীবনের এমন কোনো বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে না। সুস্থ থাকতে হবে’। ১২ জুন শনিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩০ জুন পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
করোনা মহামারির শুরুর দিকে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে মন্ত্রণালয় নিয়মিত বিরতিতে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ বাড়ানোর খবর এটা কততম বা কয় দফা তার হিসাব আর কেউ এখন রাখছে না। আর আগেই বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার পর। প্রশ্ন হলো, টিকার কর্মসূচি কতদিনে শেষ হবে?
শিক্ষাবিদেরা ধাপে ধাপে খোলার পরামর্শ দিলেও মন্ত্রণালয় চায় একসঙ্গে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে। কিন্তু সেটিও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। আবার শিক্ষার্থীদের টিকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজেও খুব একটা গতি নেই।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জনসংখ্যার বড় অংশকে গণটিকাদানের আওতায় না আনতে পারা পর্যন্ত করোনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে না। সেটার জন্য এক থেকে দুই বছর বা তার বেশি সময়ও লাগতে পারে। প্রশ্ন হলো, তত দিন কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, সরাসরি পাঠদান ও পরীক্ষার বিকল্প ব্যবস্থা কী হবে। এটা ঠিক যে পরিস্থিতির উন্নতি না হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে করোনা দীর্ঘস্থায়ী হলে বিকল্প ব্যবস্থা ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা কী, তা জানিয়ে দেওয়া উচিত।
তা না করে বার বার ছুটি বাড়াতে থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীরা আশাহত হচ্ছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন বলেন, ‘ছুটি বৃদ্ধির অপরিকল্পিত পদক্ষেপ দেখতে দেখতে ক্লান্ত ও হতাশ হয়ে গিয়েছি। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে এখান থেকে বের হওয়ার পথ বের করতে হবে।’
জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানায়, বিশ্বে বেশি দিন স্কুল বন্ধ থাকা ১৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
এতো দীর্ঘ সময় ধরে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ছে হতাশা। বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম, ঝরে পড়ার আশংকা তো আছেই। ঝরে পড়া বন্ধ করতে সরকারের নানামুখী প্রকল্পগুলোও যে আগামীতে ঝরে পড়া রুখতে কতটা কার্যকর হবে তা ভাববার অবকাশ রয়েছে।
যদিও সরকার শিক্ষা কার্যক্রমকে সচল রাখতে ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মধ্যে রাখতে অনলাইন ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট এর মত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে। সরকার সংসদ টিভি ও রেডিওতে রেকর্ড করা ক্লাস প্রচার করছে।
তারপরও ভাবতে হবে করোনার মধ্যে শহরের শিক্ষার্থীরা অনলাইনে পড়াশোনা করতে পারলেও গ্রামের শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে।
এবার ভিন্ন চোখে শিক্ষার পাশাপাশি দেশের রাজনীতির দিকে খেয়াল করলে দেখা যাচ্ছে অন্য এক চিত্র। এক বছরের অধিককাল সময় ধরে করোনার মধ্যেও থেমে নেই নির্বাচন। এরই মধ্যে উপজেলা, পৌরসভা,ইউনিয়ন এমনকি সংসদ, সব নির্বাচনই হচ্ছে। কোমলমতি শিশুদের জন্য করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এর আগে শিশু বিনোদন কেন্দ্রগুলোও খোলা হয়েছে।
যখন করোনার সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি তখনও দেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। বলছেন, করোনার চেয়ে নির্বাচন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া নির্বাচনে করোনার বিস্তার ঘটায় এমন যুক্তিতে আমি বিশ্বাস করি না। করোনা বিস্তারের ১০০টি কারণের মধ্যে নির্বাচন একটি কারণ হতে পারে মাত্র। আগামী ২১ জুন বরিশাল বিভাগের ১৭৩টি ইউনিয়নে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে।
এখন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও জনমনে প্রশ্ন করোনা কি শুধুই স্কুল কলেজে? নির্বাচনে নেই?