সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের করুণ মৃত্যুতে ফুঁসে উঠেছে পুরো আমেরিকা। বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। ২৯ মে মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট শহরের ডাউন টাউনে বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময় গুলিতে বিক্ষোভরত এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ডেট্রয়েট পুলিশ বলেছে, এ ঘটনায় পুলিশ জড়িত নয়।
গত সোমবার আমেরিকার মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনেপোলিস শহরে পুলিশের নির্যাতনে জর্জ ফ্লয়েড (৪৬) নামের এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু হয়। যার ফলে ছড়িয়ে পড়ে পুলিশের সাথে দাঙ্গা। এরই সূত্র ধরে ২৯ মে এ ঘটনা ঘটে।
ডেট্রয়েট পুলিশ বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেন, রাত প্রায় সাড়ে ১১ টার দিকে একটি গাড়ি থেকে অপরিচিত এক ব্যক্তি বিক্ষোভরত জনতার মধ্যে এক ব্যক্তিকে গুলি করে পালিয়ে যান। পরে গুলিবিদ্ধ ১৯ বছর বয়সী ঐ ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে ।
জানা গেছে , বিক্ষোভে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়। শুরুতে বিক্ষোভ সমাবেশ শান্তিপূর্ণ থাকলেও পরে পাথরের আঘাতে একজন পুলিশ আহত হলে বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর হয়। ঘটনাস্থল থেকে নয় জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে।
এদিকে করোনা লগডাউনের পর আগামী ১ জুন থেকে মিশিগানের সেক্রেটারি অব স্টেট অফিসগুলো খুলবে। তবে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য অবশ্যই আগে থেকে অ্যাপয়েন্টম্যান্ট নিতে হবে।
উত্তাল আন্দোলনে চাপা পড়ে গেছে করোনার ভয়। বিক্ষোভে উত্তাল রাজপথ রক্তাক্ত আমেরিকা। লকডাউনের মধ্যেও টানা তিন দিন ধরে নিউইয়র্কে মানুষ নেমে এসেছেন রাজপথে। পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে নানা স্লোগানে উত্তাল বড় বড় নগরী। পুলিশের সঙ্গে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছেন বিক্ষুব্ধ মানুষ।কোনোভাবেই ক্ষুব্ধ মানুষের মিছিল থামছে না। ৩০ মে রাতে নিউইয়র্ক নগরের ব্রুকলিনে হাজারো মানুষের উত্তাল বিক্ষোভে গাড়ি পুড়েছে, পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় রক্তাক্ত হয়েছে মিছিল।
শতাধিক গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। এখনো লকডাউনে থাকা এই নগরের মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে। বিক্ষোভ থামাতে ব্রুকলিন ব্রিজের একাংশ রাত আটটার দিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ম্যানহাটানের অপর দুটি সংযোগ সেতু, উইলিয়ামসবার্গ ব্রিজ এবং ম্যানহাটান ব্রিজও আংশিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
শনিবার রাতে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ রক্তাক্ত ছবি প্রচার করেছে। রক্তাক্ত ছবি প্রকাশ করে নিউইয়র্ক পুলিশের কমিশনার ডারমন্ট শে বলেছেন, যখন ইট ছুড়ে মারা হচ্ছে, তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সত্যিই কঠিন হয়ে পড়েছে।
আমেরিকার মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের জর্জ ফ্লয়েড নামের ৪৬ বছর বয়সী এক বাস্কেটবল খেলোয়াড়কে গত সোমবার গ্রেপ্তার করতে গিয়ে হত্যা করেন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক চাওভিন। তাঁকে হত্যার ঘটনা এক প্রত্যক্ষদর্শী ভিডিও করেন। ধারণ করা ১০ মিনিটের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, গলায় হাঁটু চেপে ধরায় ফ্লয়েড নিশ্বাস না নিতে পেরে কাতরাচ্ছেন এবং বারবার বলছেন, ‘আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না।’ ভিডিওটি ভাইরাল হলে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়। মিনেসোটা থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো আমেরিকায়। কৃষ্ণাঙ্গদের পাশাপাশি অনেক শ্বেতাঙ্গও এই আন্দোলনে শামিল হয়েছেন। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ঐ পুলিশ অফিসারকে।
এই ঘটনায় বেশ কিছু নগরে শনিবার রাতেই কারফিউ জারি করা হয়েছে। শনিবার ফিলাডেলফিয়ায় সহিংসতার ঘটনায় বিক্ষোভ থেকে ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সহিংসতায় ১৩ পুলিশ অফিসার আহত হয়েছেন। শনি ও রোববার রাত আটটা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত নগরীতে কারফিউ জারি করা হয়েছে।
ডেট্রয়েটের কর্কটাউন থেকে শত শত মানুষ হাতে প্ল্যাকার্ড, পোস্টার নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন সড়কে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করেন। টানা পাঁচ ঘণ্টা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করার পর মিছিলটি রাত প্রায় ১০টার দিকে ডেট্রয়েট পাবলিক সেফটি হেডকোয়ার্টারের সামনে এসে পৌঁছায়। এ সময় পুলিশ সমাবেশকে বেআইনি ঘোষণা করে সকলকে ঘটনাস্থল ছেড়ে যেতে অনুরোধ জানায়। কিন্তু প্রতিবাদকারীরা ঘটনাস্থল ছেড়ে না গিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট, পাথর নিক্ষেপ শুরু করে। এতে পুলিশের একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ অবস্থায় পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশঘটনাস্থল থেকে পাঁচ প্রতিবাদীকে গ্রেপ্তার করেছে।
সূত্রঃ রয়টার্স