1. admin@khoborakhobor.com : খবরাখবর :
আকিবের মাথার খুলির অংশ পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়েছে - খবরাখবর
সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ১২:৩২ অপরাহ্ন

আকিবের মাথার খুলির অংশ পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়েছে

  • Update Time : রবিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২১
মেডিকেল ছাত্র আকিবের মাথায় লেখা 'হাড় নেই, চাপ দিবেন না'
মেডিকেল ছাত্র আকিবের মাথায় লেখা 'হাড় নেই, চাপ দিবেন না'

আকিবের মাথার খুলির অংশ পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়েছে। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই চোখও। মাথাভর্তি সাদা ব্যান্ডেজ। দুই চোখও ব্যান্ডেজে ঢাকা। মাথার সাদা ব্যান্ডেজে ডাক্তার লিখে দিয়েছেন ‘হাড় নেই, চাপ দিবেন না।’ মাথার একপাশে এঁকে দেওয়া হয়েছে ‘বিপদজনক চিহ্নও’।

জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা এই শিক্ষার্থীর নাম মাহাদি জে আকিব। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পড়তে এসে নিজের কলেজের সহপাঠীদের হামলায় তার স্থান হয়েছে এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)।

সহপাঠিরা হামলা চালিয়ে থেঁতলে দিয়েছে তার মাথার খুলি। এতে ভেঙ্গে গেছে মাথার হাড়। মস্তিষ্কে হয়েছে প্রচুর রক্তক্ষরণ। এমন অবস্থায় ঝুঁকিমুক্ত নন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ৪৮ ঘণ্টায় রাখা হয়েছে অবজারভেশনে।

গত শনিবার সকাল ৯টার দিকে চমেকের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে মাত্র ৫০ সেকেন্ডেই ৮-১০জন যুবক তার ওপর হামলা চালায়। এর পর থেকে আইসিইউতে নিথর পড়ে আছেন আকিব।

সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, গত শনিবার সকাল ৯টার দিকে কলেজের সামনের সড়কের ফুটপাতের ওপর কলেজে সাদা এপ্রোন পড়া অবস্থায় দৌড়াচ্ছেন আকিব। পেছনে কয়েকজন ধাওয়া করছে তাকে। প্রতিপক্ষের হামলা থেকে বাঁচতে দৌঁড়াচ্ছে তিনি। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে একপর্যায়ে পড়ে যান। আবার উঠে দৌঁড় দেবার আগেই এপ্রোন পড়া পেছন থেকে একদল যুবক (তারই ব্যাচমেট) তাকে এসে ধরে ফেলে। তাকে ঘিরে ধরে শুরু করে মারধর। এরপর শুরু হয় খুর দিয়ে একের পর কোপ। তাদের থামাতে চেষ্টা করেও পারেননি আকিব। হামলার সময় সড়কের চারপাশে ছিল অনেকে। তবে সবাই কেবল তাকিয়ে দেখছেন হামলার দৃশ্য। ভয়ে এগিয়ে আসেননি কেউই। প্রায় ৫০ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে আকিবের মাথা থেঁতলে দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে আকিবের কয়েকজন সহপাঠি এসে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় চমেক হাসপাতালে।

নিউরো সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এসএম নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, ‘আকিবকে যখন আমরা পাই তখন তার মাথা পুরোপুরি থেঁতলানো ছিল। হামলায় তার মাথার হাড় ভেঙে গেছে; মস্কিষ্কেও রক্তক্ষরণ হয়েছে প্রচুর। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ব্রেইন। অপারেশন করে মাথার কিছু অংশ তার শরীরের মধ্যে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। এখনও ঝুঁকিমুক্ত না হলেও আগের চেয়ে তার শারীরিক অবস্থা ভালোর দিকে। তাকে ৪৮ ঘণ্টার অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। তারপরেও আমরা আশাবাদী আকিব সুস্থ হয়ে উঠবেন।’

সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহফুজুল কাদের বলেন, ‘তার মাথার আঘাত খুব প্রকট ছিল। মাথার হাড়ের একটা অংশ খুলে আপাতত তার পেটের চামড়ার নিচে রাখা হয়েছে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে সেটি আবার আগের জায়গায় প্রতিস্থাপন করা হবে।’

প্রকাশ্যে এমন ঘটনায় চট্টগ্রাম নগরজুড়ে বইছে আলোচনা-সমালোচনা।

কলেজের ৫৮ তম ব্যাচের খোরশেদ ইসলাম রবিন বলেন, ‘আকিবের অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা ভালো বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারপরেও বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। রোববার সকালে একদল চিকিৎসক তার চিকিৎসা নিয়ে বোর্ড বসান। তার ওপর এমন হামলা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।’

এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা ৫৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘পরিকল্পিত ও অতর্কিতভাবে আকিবের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। রামদা দিয়ে কোপানো হয় মাথায়। খুর ও হকিস্টিক দিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। এমন হামলা কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে না গেলে সেখানেই হয়তো তার মৃত্যু হতো।’

চিকিৎসকরা জানান, শনিবার রাতেই আকিবের অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে। রোববার সকাল থেকে তার জ্ঞান কিছুটা ফিরেছে।

এদিকে আকিবের ওপর হামলাকারী দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আকিবের বাড়ি কুমিল্লা জেলার কোতোয়ালী থানার বাদুরতলায়। তিনি চমেকের এমবিবিএস ৬২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। আকিব নটর ডেম কলেজ থেকে পাস করে চমেকে ভর্তির সুযোগ পান।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

© khoborakhobor.com All rights reserved
Designed by khoborakhobor@team