খেলাধূলার খবরাখবরঃ দীর্ঘ বিরতির পর শ্রীলংকা সফর দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরছে বাংলাদেশ। এই সময়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো যোগ দিতে পারবেন কি না তা নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা। শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন টেস্টের সিরিজ শুরুর সূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। আগামী ২৪ অক্টোবর শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল।
বিসিবির পক্ষ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানানো হয়েছে, আগামী ২৩ অথবা ২৪ সেপ্টেম্বর মুমিনুলরা কলম্বোর উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়বেন। তাদের সঙ্গে শ্রীলংকা সফরে যাবে হাইপারফরম্যান্স দলও।
বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্সের চেয়ারম্যান আকরাম খান নিশ্চিত করেছেন যে, তিনটি টেস্টই কলম্বোয় অনুষ্ঠিত হবে। বোর্ড অবশ্য তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজেরও প্রস্তাব করেছিল। শ্রীলংকা ক্রিকেট বোর্ডেরও তাতে সাড়া ছিল। তবে নভেম্বরের মাঝামাঝি যেহেতু তারা লংকান প্রিমিয়ার লিগ (এলপিএল) আয়োজন করছে। তাই টি-২০ সিরিজের সম্ভাবনা কম।
ক্রিকইনফোকে আকরাম খান বলেছেন, ‘শ্রীলংকায় তিন টেস্টের সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা সত্যিই রোমাঞ্চের। একই সঙ্গে সিরিজটি আমাদের জন্য কঠিনও। কারণ আমাদের খেলোয়াড়রা চার-পাঁচ মাস ক্রিকেটের বাইরে আছে। সেখানে যাওয়ার আগে-পরে তাদের অনেকগুলো করোনা পরীক্ষা দিতে হবে। তবে আমরা আশা করছি, সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ীই এগোবে।’
শ্রীলংকা সফরে প্রথম তিন সপ্তাহ জাতীয় দল ও হাইপারফরম্যান্স দলের খরচ বিসিবিকে বহন করতে হবে। এছাড়া এই সিরিজ দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে পারেন নিষেধাজ্ঞায় থাকা সাকিব আল হাসান। ২৯ অক্টোবর শেষ হবে তার সাজা। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টেই তাই জাতীয় দলের জার্সিতে দেখা যেতে পারে দেশসেরা এই ক্রিকেটারকে। বাংলাদেশ দীর্ঘ ছয় বছর পরে টেস্ট সিরিজের জন্য শ্রীলংকা সফরে যাচ্ছে।
এদিকে জাতীয় দলের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আন্তর্জাতিক সিরিজ শুরুর আগে লম্বা সময় প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ করে দেবেন ক্রিকেটারদের। দেশ ও বিদেশ দুই জায়গাতেই হবে অনুশীলন ক্যাম্প। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে মুমিনুলদের কলোম্বো যাওয়ার দিন-তারিখ ঠিক হওয়ায় দেশে দলগত প্রশিক্ষণ ক্যাম্প শুরু হতেও তাই দেরি নেই। ঢাকায় অন্তত ২০ থেকে ২২ দিনের ক্যাম্প করার চেষ্টা করবে দল। টাইগারদের এ মুহূর্তে প্রয়োজন জাতীয় দলের কোচিং স্টাফের সদস্যদের, যারা সবাই বিদেশি।
তবে এই বিদেশি কোচদের কাজে যোগ দেওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা জটিলতা। বাংলাদেশে কাজে যোগ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গোকে। বিদেশ ভ্রমণের ছাড়পত্র চেয়ে আবেদনও করেছেন তিনি। কিন্তু ছাড়পত্রের চেয়েও দেশে ফেরার দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেছে তাকে। টাইগারদের শ্রীলঙ্কা সফর শেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকায় পরিবারের কাছে ফিরতে পারবেন কি-না জানেন না ডমিঙ্গো। তিনি জানান, ফেরার নিশ্চয়তা পাওয়ার পরই ঢাকার বিমান ধরতে পারবেন।
ডমিঙ্গো ছাড়াও জাতীয় দলের কোচিং স্টাফের আরও তিন সদস্য ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি, ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক ও ফিজিও জুলিয়ান ক্যালেফাতো দক্ষিণ আফ্রিকান। তাদের মধ্যে জুলিয়ান থাকেন অন্য দেশে। বাকি তিনজনই কাজে যোগ দেওয়ার ছাড়পত্র নেওয়া ছাড়াও দেশে ফেরার নিশ্চয়তার প্রয়োজন দেখছেন। ফেরার নিশ্চয়তা না পেলে এই তিন কোচকে জাতীয় দলের ক্যাম্পে পাওয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে। রাসেল ডমিঙ্গোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কবে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে উড়ার (ফ্লাই) অনুমতি পাব। অনুমতির জন্য অপেক্ষা করছি। সিরিজ শেষ হলে কীভাবে দেশে ফিরব তাও জানি না। এই জিনিসগুলো ঠিক হলে ঢাকায় যেতে পারব।’
জাতীয় দলের দক্ষিণ আফ্রিকান কোচিং স্টাফের জন্য সমস্যা আরও আছে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে বিমান পরিসেবা বন্ধ রেখেছে দেশটি। করোনাভাইরাসের মহামারির তীব্রতা বেশি হওয়ায় সহসা বিমান পরিসেবা চালু হওয়ার সম্ভাবনাও কম দেখছেন টাইগার কোচ। তবে বিসিবি ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম খান জানান, ছাড়পত্র পেলে কোচদের ঢাকায় আনার ব্যবস্থা করবেন তারা।
তিনি বলেন,’কোচদের আসতেই হবে। আসার ব্যবস্থা আমরা করব। আমরা ওটা দেখছি, কীভাবে কী করা যায়। এটা নিয়ে আলাপ হয়েছে। ওদের ওয়ার্ক পারমিট আছে। ছাড়পত্র নিয়ে ওরা আসতে পারবে।’ আকরাম জানান, দক্ষিণ আফ্রিকার তিনজন ছাড়া অন্য কোচদের আসা-যাওয়ায় তেমন সমস্যা হবে না। পেস বোলিং কোচ ওটিস গিবসন ইংল্যান্ড হয়ে বাংলাদেশ বিমানে ঢাকায় আসতে পারবেন। বিসিবি চাইলে নিউজিল্যান্ড থেকে শ্রীলঙ্কায় দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারবেন স্পিন বোলিং কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টরি। কম্পিউটার অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাসনও যেতে পারবেন ভারত থেকে। সেক্ষেত্রে টাইগারদের ঢাকার ক্যাম্পে বেশি প্রয়োজন প্রধান কোচ রাসেলকে।
যদিও বিসিবি থেকে জানা গেছে কোচিং স্টাফের সদস্যদের ঢাকার ক্যাম্পেই যোগ দিতে বলা হয়েছে। জিম্বাবুয়ে সিরিজের পর যে যার দেশে ফিরে গেছেন জাতীয় দলের কোচিং স্টাফের সদস্যরা। করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে টাইগারদের খেলা না থাকায় কোচদেরও ঢাকায় আসার প্রয়োজন পড়েনি। এবার খেলা শুরু করার সিদ্ধান্ত হওয়ায় কোচদেরও ডাক পড়েছে বিসিবি থেকে।